গণফোরামের কাউন্সিল নানা নাটকীয়তায় শেষ হয়েছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিলেট-২ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর গণফোরামের সিদ্ধান্ত না মেনে সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খানকে মঞ্চে বসানো নিয়ে এই নাটকীয়তার শুরু। সকালে কাউন্সিলের শুরুতেই এ নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতা-কর্মীরা।
দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে, গণফোরামের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের পদে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া।
আট বছর পর গণফোরামের বিশেষ এই কাউন্সিল হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে দিনব্যাপী কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান কাউন্সিল সভায় কামাল হোসেনের তিন আসন পরেই বসেন। মঞ্চে তাঁকে দেখেই নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
Eprothom Aloআজকের কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন না দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানানো হয়। মোকাব্বির খানের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনার (মোকাব্বির খান) ব্যাপারে আমাদের বেশির ভাগ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। আজ উনি কীভাবে বসলেন, তা আমাদের সভাপতিই (ড. কামাল হোসেন) বলতে পারবেন। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। মাঝপথে এসে এ রকম হোঁচট আশা করিনি। এটার একটা সুরাহা হওয়া উচিত।’
এদিকে কাউন্সিল চলাকালীন সভাস্থলের বাইরে এসে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম দ্বৈত অবস্থান যেখানে থাকে, সেখানে তো রাজনীতি করা যায় না। মোকাব্বির প্রশ্নে তিনি (ড. কামাল) কোনো পরিষ্কার বক্তব্য দিচ্ছেন না। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান ড. কামালের সাহস পেয়েই সংসদে গিয়েছে। শপথ নিয়ে মোকাব্বির খান কামাল হোসেনের বাসায় বিকেলে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে যান। উনি তো ফুল মিষ্টি ফিরিয়ে দেননি।’ পথিক আরও জানান, দলের চাপে পড়ে তিনি মোকাব্বিরকে চেম্বার থেকে বের করে দিয়েছিলেন। কামাল হোসেন নিজের অবস্থান তো পরিষ্কার করছেন না অভিযোগ করে পথিক বলেন, ‘আপনি যে গণতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেন, তা গণফোরাম প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্ষোভে, দুঃখে আমি পদত্যাগ করব।’
কাউন্সিলের শেষ পর্যায়ে গণফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক জানে আলম মোকাব্বির খানের প্রসঙ্গে তুললে উপস্থিত নেতা কর্মীরা ‘শেম শেম’ বলে চিৎকার করেন। মঞ্চে তখন কামাল হোসেন ও মোকাব্বির খান দুজনেই উপস্থিত ছিলেন। তবে কামাল হোসেন এই কাউন্সিলে মোকাব্বিরকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে গণফোরাম থেকে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রথমে শপথ নেন। এরপরেই গত ২ এপ্রিল শপথ নেন মোকাব্বির খান।
এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়ে রেজা কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কামাল হোসেন সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনার কারণ হিসেবে গণফোরামের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে দল বড় হয়নি। এ ছাড়া রেজা কিবরিয়ার যোগাযোগ ভালো এবং তিনি দক্ষ বলে মনে করেন দলের অনেকে।
আজ কাউন্সিল হলেও কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। খুব শিগগিরই কমিটি করা হবে জানানো হলেও দলের অনেক নেতা বলছেন, বর্তমান কমিটিই এক বছর চলবে। নতুন কমিটি হতে গেলে আরও একটি কাউন্সিল হতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন