বিএনপির আরো চার এমপিকে শপথ নেওয়াতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে সরকারপক্ষ। এই চারজন আগামী সপ্তাহে শপথ নিতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া প্রত্যেকেই সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের এক নম্বর দাবি কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি। সংসদে গিয়ে এ দাবি করবেন এবং এ নিয়ে সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে বলে সরকারের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন গতকাল শপথ নেওয়া ও শপথ গ্রহণে ইচ্ছুক বিএনপির এমপিরা।
আগামী রবিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত বিএনপির দুই এমপি হারুন অর রশীদ ও আলহাজ আমিনুল ইসলাম শপথ নিতে পারেন বলে সরকারসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো কালের কণ্ঠ’র কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এর পরপরই শপথ নিতে পারেন বিএনপির আরো দুজন।
বিএনপির এমপির শপথগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা অত্যন্ত শুভ উদ্যোগ। যদিও তা আরো আগেই করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, অন্য যাঁরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন অথচ এখনো শপথ নেননি, তাঁরা দ্রুতই শপথ নেবেন বলে আশা করি।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে শপথ নেওয়ায় আমরা বিএনপির এমপিকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করব এখনো যাঁরা শপথ নেননি, তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ গ্রহণ করে জাতীয় সংসদের কার্যক্রমে যোগ দিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আট সংসদ সদস্যের শপথগ্রহণ ইস্যুতে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার। যদিও সরকারি দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না, তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছে বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যান। কারণ এতে একদিকে বিএনপি চাপের মধ্যে পড়বে, অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এক ধরনের বৈধতা পাবে।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের দিনই ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা নতুন নির্বাচনেরও দাবি জানান। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত গণফোরামের দুই এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোকাব্বির খান আগেই শপথ নিয়েছেন এবং ঠাকুরগাঁও থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান গতকাল শপথ নেওয়ায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বাড়ল, যা রাজনৈতিকভাবে সুবিধা এনে দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ার পর চাইলে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখা হবে। কারণ তারা মনে করে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যেকোনো বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতেই পারেন। সে অধিকার জনগণ তাঁদের দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওই নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে আরো বলেন, শপথ নিতে আগ্রহী বিএনপির এমপিরা এরই মধ্যে তাঁদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন