নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের দিন থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শপথ নেয়ার যে বিধান রয়েছে, সেই সময় শেষ হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। এই সময়ের মধ্যে কেউ শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা তাদের নির্বাচিত ছয়জনের শপথ না নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত দলটিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার শপথ না নিলে বিএনপি টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদের বাইরে থাকবে।
তবে বিএনপির নির্বাচিত কয়েকজন সংসদ সদস্য বলেছেন, শপথ নেয়ার প্রশ্নে বিএনপি সিদ্ধান্ত বদলায় কিনা, তারা এখন সে জন্য অপেক্ষা করছেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দলটির নীতিনির্ধারক বা হেভিওয়েটদের কেউই জয়ী হতে পারেননি। নির্বাচিতদের অন্য পাঁচজনই মাঠপর্যায়ের নেতা।
ফলে নীতিনির্ধারকরা শপথ নেয়ার বিপক্ষে দলকে নিয়ে গেছেন বলে নির্বাচিতদের অনেকে মনে করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত বদলায় কিনা, তারা এখনও সেই অপেক্ষায় আছেন।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে জনগণের পক্ষ থেকে দাবি রয়েছে যে, আমরা যেন সংসদে যাই। সেটি আমরা দলের নেতাদের জানিয়েছি। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের শপথ নেয়ার পক্ষে মতামত যেন দেয়া হয়, সেটিও আমরা জানিয়েছি। এখন আমরা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
বিএনপি নেতাদের অনেকে বলেন, নির্বাচিতদের কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিতে পারেন, এমন সন্দেহ দলটিতে তৈরি হয়েছে।
এমনকি শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জয়লাভ করায় তার সঙ্গে অন্য নেতাদের সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল এবং তা এখনও রয়েছে।
এ ব্যাপারে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তাদের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ বা ব্যাখ্যা নির্বাচিতদের ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা তো বললামই যে এটি নির্বাচন হয়নি। আমরা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করলাম। যেখানে আমরা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সিদ্ধান্ত হলো যে, আমাদের নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়াটা সঠিক হবে না। আমরা এই সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার জন্য সংসদে যেতে পারি না।
বিএনপিদলীয় একজন সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, সংসদে না গেলে তাদের দলের এখনকার পরিস্থিতিতে লাভ-ক্ষতির কিছু নেই। কারণ তারা বিপর্যয় পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছেন।
তিনি বলেন, আর কত সমস্যা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্যায়ভাবে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে রাখা হয়েছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এক যুগ ধরে দেশের বাইরে আছেন। লাখ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
‘ওই যে শরৎচন্দ্র বলেছিলেন- মরার আবার জাত কী? আপনি যখন মেরেই ফেলবেন, একটা লাশ আপনি নদীতে ফেলেন বা পুকুরে ফেলেন বা যাই করেন না কেন, লাভ-ক্ষতির কি আছে? এখন বিএনপির ওপর যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে, তাতে সংসদে গেলে কি সেসব বন্ধ হবে?’
তিনি মনে করেন, সংসদে না গেলে তাদের দলে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না। দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও একটি বড় অংশ একই মত পোষণ করেন।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিএনপির একজন নেত্রী নাসিমা আকতার চৌধুরী বলেছেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তির দাবির ব্যাপারে সরকারের কোনো সাড়া নেই। ফলে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন, তারা সংসদে গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দেশে ভোটারদের কাছে সরকার বৈধতা পাবে। সেটি সরকারের জন্য লাভ হবে। তারা আরও বলেন, বিএনপি সংসদে না গেলে দলটি আপসহীন একটা অবস্থানও তুলে ধরতে পারবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন