শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার ‘খোয়াব’ দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বির্তক থাকতো না, প্রশ্ন উঠতো না। বাকশাল ছিলো সর্বোত্তম পন্থা। প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক বাকশাল পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বিনাভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আজীব ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখছেন শেখ হাসিনা। তিনি আগে ভাগে জানিয়ে দেন তিনি কি করতে চাচ্ছেন।”
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘ বাকশালের ভোট কোথায়? বাকশাল মানে তো একদলীয় ব্যবস্থা। তার মানে আওয়ামী সরকার ও তার যে প্রধান জনগনকে একেবারে বেকুব, একেবারে বোকা মনে করে। উনি (শেখ হাসিনা) মনে করেন, তার অবৈধ ক্ষমতার জোরে যা ইচ্ছা বলবেন সেটাই মানুষ বিশ্বাস করবে। অথচ মানুষ এতো বেকুব নয়। মানুষ যদি বোকা হতো তাহলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদের দুই দফা নির্বাচনে ভোট দিতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতো।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ ক্ষমতাসীন এক ব্যক্তির ক্রোধানলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই ব্যক্তি এখন বাকশালের গুনগান গাইছেন। তিনি এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার করেই ক্ষান্ত নন, এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাকশাল নামেই একদলীয় শাসন চূড়ান্তভাবে কায়েম করে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। দেশে এখন শুধুমাত্র একদল নয়, এক ব্যক্তির বেপরোয়া শাসন চলছে। কেবল প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই হবে।”
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগেরদিন মধ্য রাতের ভোট দেয়ার যেসব ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের বক্তব্যের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সস্প্রতি ‘বাকশাল কার্য্কর থাকলে নির্বাচন নিয়ে বির্তক হতো না’ এই বক্তব্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন
খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে তার পরিণতি শুভ হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন,‘‘ দেশের মানুষের বুঝতে এতটুকু বাকি নেই যে, প্রধানমন্ত্রীকে চরম প্রতিহিংসার বাসনা চরিতার্থ করতে পেয়ে বসেছে। তিনি পরিত্যক্ত অন্ধকার স্যাঁতসেতে কারাগারে ভয়াবহ ও চূড়ান্ত অসুস্থ দেশনেত্রীর যন্ত্রনার ছটফটানি দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন।আজকে দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, তিনি(শেখ হাসিনা) অকল্পনীয় জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জীবিত দেখতে চান না। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ ৭৪ বছরের একজন নারী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রহসনমুলক বিচারের জন্য কারাগারে স্থাপিত মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাঙ্গারু আদালতে টেনে-হিচড়ে প্রায় প্রতিদিনই হাজির করা হচ্ছে। দেশনেত্রীকে চলৎশক্তিহীন করার জন্য তার সুচিকিৎসা করানো হচ্ছে না।”
সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘‘ চোখ কান খোলা রেখে জনগণের দিকে তাকিয়ে দেখুন তারা কি চাচ্ছে। তাদের ফুসেঁ ওঠার সময় এসেছে। বেগম খালেদা জিয়া এখন প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা। গণতন্ত্রের মায়ের জন্য তাঁর আন্দোলনরত সন্তানরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে অভিমান, ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্য জনগণ অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। যেকোন সময় জনতার বিস্ফোরন শুরু হবে-যা কল্পনাও করতে পারছেন না। ভোট না দিতে পারার প্রতিশোধ আর মা কে বাঁচানোর অবিনাশী অঙ্গীকারে তারা এই অবৈধ স্বৈরাচারের তখতে তাউস খানখান করে ফেলবে। সরকারকে বলছি-আজই নিজেদের শোধরান। দেশনেত্রী ও বাংলাদেশের মা-কে মুক্তি দিন।’’
নয়া পল্টনে দলের কেন্ত্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা এবি্এম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পালাবদল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন