তিন জেলায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে গুলিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সুনামগঞ্জে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়িতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইকবাল। লাশ বর্তমানে উপজেলা সদরে আছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রাঙ্গামাটি নেওয়া প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যার ঘটনায় সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) দায়ী করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর।
তবে জনসংহতি সমিতির জেলা সম্পাদক নীলোৎপল খীসা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন (৩৮) খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর ইউনিয়নের ধলাইপাড় এলাকায় থেকে স্থানীয় লোকজন তার লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শাহীন শাহ, সেলিম, রাব্বী নামের তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “কী কারণে খুন হয়েছে তা তাৎক্ষণিক বলা সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি উদঘাটনের চেষ্টা করছি। তিনজনকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।”
তিনি বলেন, “নিহতের গলা ও পেটে ছুরির আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
অন্যদিকে, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল মির্জাচরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার চরাঞ্চল মির্জাচরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জাফর ইকবাল মানিকের ভাতিজা ইকবাল হোসেন (৩০) ও একই গ্রামের আমানউল্লাহ (২৭)।
আহত সাজ্জাদ হোসেন (২৮), আজিজুল ইসলাম (২৬) ও রহমত উল্লাহকে (১৮) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাফর ইকবাল মানিকের সঙ্গে একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মিয়ার ছেলে ফারুক ইসলামের বিরোধ চলে আসছিল।
এরই জের ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের হামলার মুখে চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থকরা এলাকা ছাড়া হয়। মঙ্গলবার তারা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ পাঁচজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
রায়পুরা থানার ওসি (অপারেশন) মোজাফর হোসেন জানান, হতাহতরা সবাই চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন