জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলের স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতকে পরিহার করতে চাইছেন।
তবে কয়েকজন সদস্য মনে করছেন, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে তার প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে। বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ দুই ইস্যুতে এমন বিভক্ত মতামত দেন নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জামায়াত ইস্যুতে আমাদের সদস্যদের মতামত ভালো না। জামায়াত আমাদের ভোগাচ্ছে। বিএনপির হাত ধরে জামায়াত তরী পার হতে চায়।
বিএনপি জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে কি না তা পরের কথা। তবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বুধবার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্থায়ী কমিটির দু’জন সিনিয়র সদস্য নির্বাচনকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।
তারা ড. কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ওই শীর্ষ নেতার কারণে কোনো দাবি পূরণ না হওয়ার পরও আমরা নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এক রকম বিএনপিকে হাত-পা বেঁধে নির্বাচনে নেয়া হয়েছিল।
তবে তখন পরিস্থিতি ভিন্ন থাকার কারণে এবং কিছু একটা হতে পারে এমন সম্ভাবনায় বিএনপি ওই নেতার ওপর ভরসা রেখেছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে ও পরে তার কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান না হওয়ায় এটা স্পষ্ট, তিনি কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।
বৈঠকে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের শপথ নেয়ার ঘটনাকেও সামনে নিয়ে আসেন বিএনপির ওই দুই শীর্ষ নেতা। তারা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে কতিপয় নেতা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়েছিল। এ জন্য তারা বিভিন্ন দলছুট নেতাকে নিয়ে নিজেদের পাল্লা ভারি করতে মনোনয়নের জন্য বিএনপিকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে ওই সময়ে। এর মধ্যে সুলতান মনসুর আহমেদও একজন।
তারা আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা ঠিক বা বেঠিক যাই হোক, রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার বিএনপিকেই হতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে জামায়াতকে নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়। জামায়াতের বিষয়ে বৈঠকে তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জামায়াতকে দীর্ঘকাল ধরে রাখার কোনো চুক্তি করেনি বিএনপি।
তাদের কারণে বিএনপিকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হচ্ছে। তাই তাদের ছাড়ার বিষয়ে এখনই চিন্তা করতে হবে। তবে স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ নেতা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে কোণঠাসা করার জন্য জামায়াত ইস্যুকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। পাশের দেশটিও এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখছে না। এতেই প্রমাণিত- তারা বিএনপির ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব নষ্ট করার জন্য, একঘরে করার জন্য এটা করছে।
কয়েকজন নেতা ডাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসেবে জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়টিকে চিহ্নিত করেন। তারা মনে করেন, ছাত্রশিবিরের ভূমিকার কারণে তরুণ ভোটাররা ছাত্রদল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে স্থায়ী কমিটির দু’জন সদস্য বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করা হয়েছে এটা সত্য। তারপরও ভিপি-জিএস প্রার্থী এত কম ভোট পাওয়ার কথা না।
প্রার্থী নির্ধারণে কোনো ভুল হয়েছে কি না, তা নিয়েও কথা বলেন নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এতদিন যেসব নেতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন, জামায়াতের পক্ষাবলম্বন করেছেন তারাই বৈঠকে তাদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, বৈঠকে বেশিরভাগ নেতাই বলেছেন, যে ফরমেটেই বিএনপি নির্বাচনে যেত সেই ফরমেটেই একইরকম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো।
প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট কারচুপি করা হতোই। তাই এ জন্য দোষারোপের রাজনীতি করা ঠিক হবে না। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোরদার করার জন্য একা হলে চলবে না। একদিকে পুনর্গঠনের কার্যক্রম চলবে, অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিও চালু রাখতে হবে। একলা চলো নীতিতে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলেও তারা মতামত দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে প্রাধান্য না দিয়ে দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। স্কাইপির মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে যুক্ত থেকে স্থায়ী কমিটির নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। তিনি এসব বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন