নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দিনাজপুর-২ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তার বাবা আবদুর রৌফ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে মন্ত্রিসভায় ছিলেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে তিনি জানান, ‘নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গত ১০ বছর যে কাজ হয়েছে তা বিগত ৪০ বছরে হয়নি’। মানবকণ্ঠের সঙ্গে তার আলাপচারিতায় উঠে আসে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের আরো বেশ কিছু অজানা কথা।
সংসদ ভবনে তার কার্যালয়ে গিয়ে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালো আছি। দেশের মানুষ ভালো আছে, তাই আমিও ভালো আছি।’
তিনবারের এমপির কাছে এলাকার মানুষের প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের এখন কী প্রত্যাশা তা জানি না। তবে গত দু’বারই এলাকার মানুষ যা প্রত্যাশা করেছে তা কিছুটা পূরণ করতে পেরেছি বলেই এবারো তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনের সময় আমাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের দাবি আছে, প্রত্যাশা আছে। সেগুলো আমরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে এসে কর্মপন্থা নির্ধারণ করব। যাতে করে আমাদের মানুষের, সব জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণ হয়।
এলাকার মানুষের কাছে কী বার্তা পৌঁছাতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষের প্রতি সবচাইতে বড় বার্তা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার এলাকার মানুষকে তিনি এত বড় একটা মর্যাদা দিয়েছেন। তারা যাকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে। সেই প্রতিনিধি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তার মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন, এর থেকে বড় মর্যাদা আমার এলাকার জন্য আর কী হতে পারে?
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার ছাত্র জীবন শুরু আমার উপজেলা থেকে। সেখানে প্রাইমারি স্কুল ও মাধ্যমিক পড়া। এরপর দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেছি। পরবর্তী সময়ে আমি গ্রাজুয়েশন করেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। এখানে বলে নেয়া ভালো, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের জীবন অনেকটা বিপন্ন হয়ে গিয়েছিল। দুই-আড়াই বছর পরিবারে বাবার সান্নিধ্য আমরা পাই নাই। আমার বাবা আত্মগোপনে ছিলেন। প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে পুলিশ এবং আর্মি আসত বাবার সন্ধানে। আমার মা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। কখনো নানার বাড়ি, কখনো ফুফুর বাড়ি, কখনো খালার বাড়ি। এভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রথম বছর। পরবর্তী সময়ে কখনই আমাদের জীবনে আগের শৃঙ্খলা ফিরে আসে নাই। নেত্রী দেশে ফেরার পর আমার বাবা জেলা সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানেও অনেক চড়াই-উতরাই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে ’৯১ সালে খালেদা জিয়া এসেছে। তারপর ’৯৬-এ ৫ বছর আমার বাবা এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু কখনই বিষয়টা সুখকর ছিল না। মানে ক্ষমতায় আছি বলেই যে আমরা ভালো আছি বিষয়টা তেমন নয়। বরং ক্ষমতায় আসার পর বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। আর এলাকার মানুষের প্রতি আমাদের পরিবারের কমিটমেন্ট অনেক বেশি ছিল। আমি আমার পরিবার থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আর এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, আমাদের শিক্ষা জীবন নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এগুলো বড় বিষয় নয়। এগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত আমি বলব না। কারণ এগুলোর বিপরীতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব পেয়েছি, এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন, রাজনীতি করেছেন, আমি আমার বাবার পথ ধরে এসেছি। আর যখন দেখি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের ভালো লাগে। আমরা সুখ অনুভব করি, শান্তি অনুভব করি।
বাবাকে নিয়ে কোনো প্রিয় স্মৃতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা সময় সুখের। বাবা যখন আত্মগোপনে ছিলেন সেটারও সুখ ছিল। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবার শাসন থেকে দূরে ছিলাম, ওই সময়ের জন্যও একটা সুখ ছিল। বাবা যখন মন্ত্রী হলেন, তখনো সুখী ছিলাম। যখন মনে হয় রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তখন আবার এ সময়ের দিকে তাকালে মনে হয়, না ওইগুলো ছিল সুখের। আসলে বাবার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা স্মৃতিই সুখের। আর বাবা তো বাবাই। তার সঙ্গে আবার বিশেষ কেনো? তার সবকিছু স্পেশাল। তিনি তো আমার জন্মদাতা।
নিজের ছাত্র রাজনীতির সময়কার কথা জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ছাত্র রাজনীতি করেছি যখন, তখন কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা। বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি, বিচার চাই। তারপর আমাদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে এখনকার খালেদ মাহমুদ চৌধুরী হয়ে ওঠা পর্যন্ত। যখন আমি ছাত্র রাজনীতি শুরু করি তখন কল্পনা করি নাই বা চিন্তা করি নাই, আজকের এ অবস্থায় আসব। আমরা একটা আদর্শিক লড়াইয়ে ছিলাম। সেখানে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের পর আমরা জয়যুক্ত হয়েছি।
বিগত ১০ বছরে নৌ মন্ত্রণালয়ের অভূতপূর্ব উন্নয়ন
মন্ত্রণালয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই বরং বিগত ১০ বছরে নৌ মন্ত্রণালয়ের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো বিতর্ক নয়। মন্ত্রণালয় কিভাবে বিতর্কিত হবে। বিতর্ক আপনাদের সৃষ্টি। এই মন্ত্রণালয় বিতর্কিত হয়েছে বলতে হলে মন্ত্রণালয়ের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনি ঢালাওভাবে বলতে পারেন না। গত ১০ বছরে এই মন্ত্রণালয়ে যত উন্নতি হয়েছে তা পূর্ববর্তী ৪০ বছরেও হয়নি। বিশ্বে সাড়ে চার হাজারের বেশি পোর্ট আছে। তার মধ্যে ৭০তম স্থানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পোর্ট। বর্তমান সরকার আসার পর মংলা পোর্ট চালু করেছে। পায়রা বন্দর চালু করেছে। মাতারবাড়ি কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি নদী বন্দর আপগ্রেডেট হয়েছে। আমাদের ১২০০ কিলোমিটার রাস্তা ছিল। সেখানে ৩ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো যদি বিতর্কিত হয় তাহলে ভালো জিনিস কোনটা?
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয় নিয়ে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেই নৌ পরিবহন নিয়ে কী কাজ করব তার দিক নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা হবে। এ ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য আমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই মন্ত্রিপরিষদ থেকেও যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করা হবে। এখানে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রিপরিষদ যেই সিদ্ধান্ত নেবে তা অনুসারেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন