ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সম্ভবত যারা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখেন, তারা চিনতে পেরেছেন। সুবক্তা, টকশোতে ধারালো যুক্তি দেন।এবার বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়ে যে ক’জন আলোচনায় এসেছেন, ব্যারিস্টার রুমিন তাদের অন্যতম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (সরাইল ও আশুগঞ্জ) ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।রুমিন ফারহানা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয়, প্রয়াত ভাষাসৈনিক অলি আহাদের মেয়ে, যিনি নিজেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। একাধিকবার এমপি হয়েছিলেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুরের মেয়ে রুমিন ফারহানাকে নিয়ে কেন্দ্রে তুমুল আলোচনা থাকলেও ভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এই আসনের বিএনপি নেতাদের দাবি, ব্যারিস্টার রুমিন সুবক্তা। ভালো টকশো করেন। কিন্তু, তিনি জনবিচ্ছিন্ন নেতা। তৃণমূলে তার কোনো রাজনৈতিক ভিত নেই। নেতাকর্মীরা তাকে নামেই চিনেন, বিপদে-আপদে পেয়েছেন, এমন নজির নেই। ফলে রুমিন ফারহানাকে সহজভাবে নিতে পারছেন না।যেমনটি সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমানের কথায় ফুটে উঠল। যিনি নিজেও এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।পরিবর্তন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘৩২ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ২৮ বছর সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমি। রুমিন ফারহানার নাম শুনেছি, সরাসরি দেখিনি। তিনি জীবনে কখনও এই এলাকায় এসেছেন বলে মনে হয় না। এমন একজনকে তৃণমূল ভালভাবে নেবে না, এটা হাই-কমান্ডেরও বোঝা উচিত।’
তবে একই উপজেলার ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন উজ্জল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সঙ্গে দেখা হয়। দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার আগের দিন ফোন করেছিলেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার জন্য কাজ করব।’ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়েছেন এই আসনের অংশ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ। তিনিও দলীয় অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী।আবু আসিফ আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা জানি, রুমিন ফারহানার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ নির্বাচনী এলাকায়। হঠাৎ কেন আমাদের আসনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন, বুঝে আসছে না।’তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার ভোটাররা বাইরের কোনো প্রার্থীকে ভালোভাবে গ্রহণ করেন না। তাদের ভাষ্য, শুনলে মোদের হাসি পায়, ভিনদেশীরা ভোট চায়। যারা মনোনয়ন দিবেন, তাদের তৃণমূলের এই বার্তা বোঝা উচিত।’
তবে আশুগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি ফাইজুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম কেনার পর সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আমার সঙ্গেও কথা হয়েছে। দল যাকে ধানের শীষ দেবে, তার জন্যই আমরা কাজ করব।’তৃণমূলের মনোভাব বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তারা নির্ভয় দিয়েছেন বলেইতো সাহসী হয়েছি। তা ছাড়া আমার বাবা এই জনপদের মাটি-মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’বহিরাগত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আমার ভিটাবাড়ি ইসলামপুর সরাইলের অধীনে ছিল। সেবার আমার বাবা এখান থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেই হিসেবে সরাইল কিন্তু আমারও। যদিও পরে সীমানা পুনঃনির্ধারণে ইসলামপুর বিজয়নগরের অধীনে চলে গেছে।’এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্দেশে বেশিরভাগ সময় আমাকে দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। দেশেও প্রত্যেক দিন টিভি চ্যানেলে দলের হয়ে কথা বলছি। সরাইলে থাকলে যেটি সম্ভব হতো না।’
তিনি দাবি করেন, ‘দীর্ঘদিন বিএনপি সরকারের কারণে কোণঠাসা। মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। দল সিগন্যান দিলে তৃণমূলে যোগাযোগ বাড়বে, তখন সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে। সবাই ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ করবে।’ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. আজিজ আহমেদ, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএন তরুণ দে, জাভেদ হাসান স্বাধীন, আহসান উদ্দিন খান শিপন, আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান এবং সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টার।এদের মধ্যে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া এই নির্বাচনী আসন থেকে বিএনপির হয়ে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটকে আসনটি ছেড়ে দেয়। সেবার বিজয়ী হন দলটির প্রয়াত আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনী। অবশ্য সেবার উকিল আব্দুস সাত্তারকে প্রতিমন্ত্রী করেন খালেদা জিয়া।
poriborton
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন