কিশোরগঞ্জ জেলার ৬টি আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-১ আসন। আর ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব রয়েছে এ আসনটির। তাই গোটা জেলার নেতাকর্মীরা থাকিয়ে আছেন কে আসছেন এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে নৌকার মাঝি হতে।
জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে এখন একই প্রশ্ন ও আলোচনা- যদি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার শারীরিক অসুস্থতার জন্য নির্বাচন করতে না চান, তাহলে এ আসনটির মনোনয়ন কে পাবেন?
অন্যদিকে, বিএনপি নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দিকে থাকিয়ে আছেন। তাদের দাবি, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যদি নির্বাচনে না আসেন, আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে তাদের জয় নিশ্চিত।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ প্রতিনিধির কাছে বিভিন্ন মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বলেন, আমরা আশা করছি, তিনি (সৈয়দ আশরাফ) সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং নির্বাচন করবেন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সকলেই প্রত্যাশা করছেন, তিনি এসে এই আসনে নির্বাচন করবেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সৈয়দ আশরাফ যদি শারীরিক কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে কেমন হবে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ও ভোটযুদ্ধের চেহারা? আশরাফের অনুপস্থিতিতে কে ধরবেন নৌকার হাল? কে হবেন নৌকার মাঝি?
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে সুস্পষ্ট কোনো বিকল্পের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সবাই একটি কথা জোর দিয়ে বলেছেন, সৈয়দ আশরাফ সুস্থ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে কোনো বিকল্পের প্রয়োজন হবে না। তবে তিনি যদি অগত্যা আসতেই না পারেন, তাহলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্মিলিত হয়ে একক প্রার্থী বাছাই করা কষ্টকর হবে। কারণ মাঠে গোপনে ও প্রকাশ্যে কাজ করছেন অনেক নেতা।
কিশোরগঞ্জের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র মনে করছে, সৈয়দ আশরাফের স্থলে সৈয়দ পরিবারের কেউ একজন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইবেন, যদিও তেমন কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে আসেননি। তবে সম্প্রতি সৈয়দ আশরাফের আরো দুই ভাই কিশোরগঞ্জ সদরের ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের এলাকার এই আসনটি সৈয়দ পরিবার নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে চাইবে। অন্যদিকে, সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির মেঝ ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন কয়েক মাস ধরে ব্যাপক জনসংযোগ ও জনসমাবেশ করে চলেছেন। সরাসরি নিজের প্রার্থিতার কথা না বললেও দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, মাঠে নানা ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এবং প্রচার-প্রচারণা নিয়ে সরব রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক কৃষিবিদ মশিয়ূর রহমান হুমায়ূন। তিনিও নৌকার মাঝি হয়ে আসতে পারেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনে।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রকাশ্যে একাধিক প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগের জেলা স্তরের বেশ কয়েকজন নেতা তৃণমূলে নিজের প্রার্থিতা নিয়ে কাজ করছেন। কিশোরগঞ্জ সদরের বাসিন্দা হিসেবে তারা প্রতিনিয়ত জনসংযোগ করছেন, যা ওইভাবে প্রচার হচ্ছে না। দলের ইউনিয়ন ও গ্রামে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সময় তাদের নামও সামনে চলে আসবে।
বস্তুত পক্ষে, সৈয়দ আশরাফের অবর্তমানে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে ও গোপনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজ করায় এদের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একজন প্রার্থী নির্ধারণ করা কতটুকু সম্ভব হবে, এ ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরই সব কিছু নির্ভর করবে বলে জানান তারা।
এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রার্থিতার বিষয়ে দলের স্পষ্ট ইঙ্গিত না থাকায় কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। দলের নেতাকর্মীরা দিক-নির্দেশনা ও উৎসাহ না পেয়ে এক ধরনের অপেক্ষার প্রহর কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রচারণার কাজ চালালেও দলের জেলা, উপজেলা, শহর কমিটিগুলো রয়েছে নীরব।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়নি। সবাই আশা করছি, দলের সিনিয়র নেতা সৈয়দ আশরাফ অচিরেই সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে এসে নির্বাচন করবেন। যদি তা একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে আমরা দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
তারা বলেন, আমরা চেষ্টা করব, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে যোগ্যতম কাউকে বেছে নিতে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মূল বিষয় হলো সৈয়দ আশরাফের সুস্থতা। কারণ কিশোরগঞ্জ-১ আসনের জনগণ ও নেতাকর্মীরা তার ফিরে আসার অপেক্ষায় উন্মুখ। তিনি আসতে পারবেন না- এ বিষয়টি নিশ্চিত হলেই এই আসনে অন্য বিকল্প প্রার্থীর প্রসঙ্গ দলীয় আলোচনায় স্থান পাবে, তার আগে নয়, বললেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের একাংশ।
তবে অন্য একটি অংশ মনে করে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের এই আসনটি দলীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৈয়দ আশরাফের পাশাপাশি এখানে অবশ্যই বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলা দরকার। তাহলে নেতৃত্বের শূন্যতা হবে না ও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে গ্রুপিং-এর কোনো সুযোগ থাকবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন