ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য নতুন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে জোট করেছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যের উদ্যোক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’র আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
বিকল্পধারকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থাতেই বি. চৌধুরী, মাহী ও মেজর (অব.) আবদুল মান্নান যখন খেলাফত আন্দোলন ও মুসলিম লীগ ছাড়াও বিএনপির সাবেক-বর্তমান অনেক নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছিলেন তখন ড. কামালসহ অন্যদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দেখা দেয়। ১২ অক্টোবর রবের বাসায় বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্যসমূহের খসড়া যখন চূড়ান্ত করা হয় তখনও বাধা আসে বিকল্পধারার পক্ষ থেকেই।
নেতারা বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া যখনই একটু অগ্রসর হয় তখনই বাধ সাধে বিকল্পধারা। এতে ড. কামাল, বিএনপি ও অন্যদের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও বিকল্পধারা যে কোনসময় বের হয়ে যেতে পারে। আরও সংশয় জন্মে যে, শনিবার (১৩ অক্টোবর) বি. চৌধুরী ও ড. কামালের পৃথক বৈঠক হলে ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। সূত্র জানায়, এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই কৌশলে বি. চৌধুরীকে এড়িয়ে যান ড. কামাল। একদিনও সময় না নিয়ে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায়ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা দিয়ে দেন ড. কামাল। কৌশল, পাল্টা কৌশল আর সন্দেহ-সংশয়ের শেষ পর্যন্ত ফলাফল দাঁড়ায়, বি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফন্টের সাথে বিএনপির জোট হওয়ার ২ দিন পর মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে গেলো বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি নামে দুটি দল। জোট ত্যাগী দল দুটি বিএনপির বিরুদ্ধে একক কর্তৃত্ব চর্চা ও শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ তুলেছে। যদিও বিষয়টিকে রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখছে বিএনপি এবং এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখছে না।
এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ইসলামী ঐক্যজোট। তার আগেও এই জোটে ভাঙন এসেছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এই জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তখন দলটি অভিযোগ করেছিল, ২০ দলের জোটে বিএনপি-জামায়াত সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়, অন্যদের কথা বলার সুযোগ দেয় না। এ কারণে তারা জোটে থাকেনি।
জোটের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোনো দল জোটে না থাকতে চাইলে জোর করার কিছু নেই। নির্বাচন সামনে থাকায় হয়তো কোনো প্রলোভনের কারণে তারা (ন্যাপ-এনডিপি) জোট ছেড়েছে। রাজনীতিতে জোট গড়া, জোট ভাঙা এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি নিয়ে খুব বেশি ভাবার কিছু নেই।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি নতুন জোটের দিকে এখন বেশি মনোযোগ দিতে চাচ্ছে। যে কারণে ২৩ অক্টোবর সিলেট থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর দেশের সব বিভাগ ও মহানগরীতে কর্মসূচি পালন করবে ঐক্যফ্রন্ট। নতুন এই জোটে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী নেই। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের আরও কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে তাদের মতামত জানায়নি। এরপরও বিএনপি আগের জোটকে সঙ্গে নিয়েই নতুন জোট নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন