জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির পায়েই বল ছুড়ে দিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে জোট হবে, তবে জামায়াতের সঙ্গে নয়। আমাদের সঙ্গে জোট করতে হলে জামায়াত ছাড়তে হবে। তিনি দেশের জাতীয় স্বার্থে তাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ প্রতিক্রিয়া জানান দেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কামাল হোসেন।
কালের কণ্ঠ : আপনাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, বিশেষ করে মাহী বি চৌধুরী জোর দিয়ে বলেছেন যে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে। তবে শর্ত হলো জামায়াতকে ছেড়ে আসতে হবে। এখন বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে জামায়াত আছে। জামায়াতকে এখনো তারা জোট থেকে বাদ দেয়নি। এ অবস্থায় আপনাদের সঙ্গে ঐক্য গড়তে চাইলে আপনারা কী করবেন?
কামাল হোসেন : মাহী বি চৌধুরীর কথা বাদ দেন। আমরাই তো বলেছি, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো জোটের সম্ভাবনা নেই। বিএনপির সঙ্গে জোট হবে। তবে বিএনপি কিভাবে জামায়াত থেকে সরে আমাদের সঙ্গে আসবে, এটা তারাই ঠিক করবে। দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে আমরা জাতীয় ঐক্য করার চেষ্টা করছি। জাতীয় স্বার্থে যেকোনো দল বা ব্যক্তিই আমাদের এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
কালের কণ্ঠ : জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ প্রক্রিয়া কত দূর এগিয়েছে?
কামাল হোসেন : এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে জোরালোভাবেই এগোচ্ছে। দেখুন না, খুলনায় গেলাম। আজ বসেছি। কালও বসব। পরশু দিন মিটিং আছে। আমাদের কাজ থেমে নেই।
কালের কণ্ঠ : বিএনপি গতকালই বলেছে, আপনার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। আপনি নিজে কি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল? আর আপনার প্রতি বিএনপির আস্থা প্রকাশকে কিভাবে দেখছেন?
কামাল হোসেন : আমার ওপর তাদের আস্থা থাকলে থাকতেও পারে। উনাদের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। ওরা দেশের প্রতিষ্ঠিত দল। তারা যদি আমাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসতে চায়, তবে আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব। তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসব করব।
কালের কণ্ঠ : আপনার জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এ বক্তব্যকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
কামাল হোসেন : আলহামদুলিল্লাহ। ভালোভাবে দেখছি। উনি এই ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন বিধায় উনাকেও ধন্যবাদ জানাই। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রক্রিয়া হচ্ছে দেশের মধ্যে ঐকমত্য গমড় তোলা। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। আমাদের এই চাওয়া দেশের সব মানুষেরও। সরকারি দল থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। সব মানুষকে এক জায়গায় নিয়ে আসাই এ ঐক্যের ডাক। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা। এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিসহ বাম সংগঠনও আলোচনা করছে।
কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট রয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে এ জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্য হতে পারে কি না?
কামাল হোসেন : আমাদের ঐক্যে তাদেরও স্বাগত জানাই। আমরাও চাই আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে তারা থাকবে। আমাদের সমর্থন করবে। কারণ আমাদের দাবি কোনো একক দলের দাবি নয়। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখনো জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠেছিল। এই আন্দোলন আওয়ামী লীগই করেছিল। আজ আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি সেটা তো আওয়ামী লীগও করেছিল বিরোধী দলে থাকতে। তাই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের কার্যক্রমকে সমর্থন দেবে বলে প্রত্যাশা করি।
কালের কণ্ঠ : শেষ বয়সে এসে আপনার এই উদ্যমী উদ্যোগে আওয়ামী লীগ যদি বলে আপনি ঘরে ফিরে আসেন তাহলে আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন?
কামাল হোসেন : তাদের বলব আমাদের এই বৃহত্তর ঐক্যে এসে আপনারাও শামিল হন। এখানে সবাই থাকতে পারে।
কালের কণ্ঠ : বিএনপির নেতৃত্বে আপনাকে যদি আহ্বান করা হয় তাহলে কী করবেন?
কামাল হোসেন : ঐক্য প্রক্রিয়ায় অন্যান্য দল যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে, তারাও করুক। আমাদের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা তো সেভাবে আছে। আমি যতদূর জানি, তারা আমাদের মিটিংয়ে আসবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র যেখানে আছে সেখানে তো এভাবেই ইতিবাচক রাজনীতির চর্চা গড়ে ওঠে।
কালের কণ্ঠ : আপনার এই জাতীয় ঐক্যের নেপথ্যে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে কি না?
ড. কামাল হোসেন : আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের পেছনে অন্য কোনো শক্তি নেই। দেশের কল্যাণে সবাইকে নিয়ে কাজ করার উদ্যোগই হলো আমাদের শক্তি। দেশে সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যখনই কোনো উদ্যোগ নিয়েছি তখনই এ জাতীয় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এটা নতুন কোনো অভিযোগ নয়। এই অভিযোগ খামাখা।
কালের কণ্ঠ : সরকার যদি আপনাদের পাঁচ দফা দাবি না মানে আর যদি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা কী করবেন? প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে।
কামাল হোসেন : তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতের উদাহরণ দিলেন। সেখানে নির্বাচন কমিশন কতটা শক্তিশালী তা দেখুন। সেখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য কোনো ছাড় হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে কি তাই?
কালের কণ্ঠ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হয়েছে। এ আইন গণমাধ্যমের স্বাধীন পথচলায় বাধাগ্রস্ত করবে কি না?
কামাল হোসেন : সহজভাবে উত্তর দিই। আজকের (বৃহস্পতিবার) পত্রিকায় হেড লাইনে এসেছে সাংবাদিক নেতাদের দাবি উপেক্ষা করে আইনটি পাস হয়েছে। যাঁরা মতামত দিয়েছেন তাঁদেরটাও উপেক্ষা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে আলোচনায় বিরোধী দলীয় এমপিরাও বলেছেন, বাক্স্বাধীনতার ওপর এটা অনেক বড় আঘাত। স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরও আঘাত।
পাঠক মন্তব্য
নাই ঢাল তলোয়ার নিধীরাম সরদার
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন