বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে গাড়ি-বাড়ি, জমি ও মোটা অংকের ব্যাংক-ব্যালেন্স রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক অভিযোগপ্রাপ্তির তথ্য স্বীকার করেছেন।
বগুড়া শহরের বাদুরতলা এলাকার মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান আকন্দ এই অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা মোহনের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহন ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। টাকার পাহাড় গড়ে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব হতে বঞ্চিত করেছেন তিনি।
মোহনের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- তিনি সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মানুষকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেন। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি এবং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন।
বগুড়া শহরের একাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার যোগাসাজশ এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা, বগুড়ার পুস্তক মালিক সমিতির সিনিয়র সভাপতি হয়ে দেশে নকল ও নিম্নমানের বই ছাপিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও করা হয়েছে।
এছাড়া মঞ্জুরুল আলম মোহন ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনে এসি/নন এসি বিলাস বহুল ১৫টি গাড়ি চলাচল করে। এছাড়া তার নাম দিয়েও অনেক গাড়ি চলে যা থেকে তিনি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন।
অভিযোগে বলা হয়, মোহন নিজে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ব্যবহার করেন। তার বড় ছেলে অর্ক করোলা গাড়ি ব্যবহার করেন। তার ছেলের নামে কোনো আয়কর নথি নেই। মোহনের ছোট ছেলে অয়ন সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করেছেন। এই অয়নের নামে কাহালুর সারাই মৌজায় তিন একর জমিসহ বাগানবাড়ি রয়েছে যার মূল্য প্রায় ৪ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই জমিতে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে তিনি বাংলোবাড়ি করেছেন। সেখানে ৪তলা ভবন রয়েছে যেটা রেস্ট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
নিজ শ্বশুরবাড়ি এলাকা বরিশালে মোহন দুই কোটি টাকা ব্যয় করে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বগুড়া শহরের সুবিল এলাকায় সাধারণ বীমা ভবনের পাশে চার কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে যা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে এবং সামনে দোকান রয়েছে।
শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় হটু মিয়া লেনে ৯ শতক জমির উপর ৮ কোটি টাকায় ৪ ইউনিটের ৭তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন মঞ্জুরুল আলম মোহন।
এছাড়া ঢাকার গুলশানে ৫ কোটি টাকা মূল্যের বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজায় ১৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাট নং- ৮/এ, প্লট নং চ-৯০/এ, প্রগতি সরণি।
সদর উপজেলার এরুলিয়ায় কাহলায় মৌজায় তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৮ একর জমি রয়েছে। শহরের দত্তবাড়ি তিন মাথার পূর্ব পাশে ৯ শতক জায়গা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকায় ক্রয় করেছেন মোহন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মানের পরিকল্পনা চলছে। এর নকশাও অনুমোদন করা হয়েছে।
শহরের চকসুত্রাপুরে দেড়কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছেন মোহন। এছাড়া দেশের বাইরে ভারতের কোলকাতা শহরের মুকুন্দপুর এলাকায় মোহনের ২তলা বাড়ি রয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নামে শহরের ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা ব্যাংক, এসআইবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে।
সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করায় মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অভিযোগকারী আবদুল মান্নান আকন্দ আবেদন জানান।
আবদুল মান্নান আকন্দ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক জানান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। তারা অভিযোগের একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্রও দিয়েছেন। এখন তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে ও এসএমএস করেও তারা সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগকারী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল মান্নান আকন্দ বলেছেন, তিনি জেলার শীর্ষ দ্বিতীয় করদাতা। সরকারকে কর দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করেন। অন্য কেউ অবৈধভাবে টাকার পাহাড় গড়বে এটি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে না পারায় দুদকে অভিযোগ করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন