বর্তমান সরকারের নীপিড়নমূলক আচরণ, দুঃশাসন ও বিরোধী দল দমননীতির কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার ভালো করেই জানে- মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে তাদের অবৈধ ক্ষমতার তক্তে তাউস জনগণ ধুলোয় উড়িয়ে দেবে। সেই ভয়ে সরকার দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘১ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪ চার হাজার গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। তারা (সরকার) এখন ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। সরকার বুঝতে পেরেছে বিএনপি নির্বাচনে গেলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।’
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক বহুদলীয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এইভাবে কি ক্ষমতায় থাকা যায়? আমরা জানি আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন। জনগণও অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেয় না। ১০ বছর ধরে দেশব্যাপী ভয়াবহ দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না- দুঃশাসনের যাতাকলে জনগণ প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছে।’
মুক্তিযুদ্ধে বেগম জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের- যে নেত্রী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন সেই নেত্রীকে আজ অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। কত বড় দুঃশাসক এই ফ্যাসিস্ট সরকার, ৭৩ বছর বয়সী সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারের ভেতর আদালত বসিয়ে তাঁর বিচার করতে চাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রাখেননি অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সমস্ত সিনিয়র নেতারা অসুস্থ বেগম জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। এরকম একটা নির্মম পাশবিক সরকার গোটা দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। এদেরকে সরকারও বলা ঠিক হবে না। এরা অবৈধ ইলিগ্যাল সরকার। গায়ের জোরে প্রসাশনের জোরে বন্দুকের পিস্তলের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
যখন কোনও স্বৈরাচার সরকারের কনফিডেন্সের অভাব দেখা দেয় তখন তারা এমন নির্যাতনের পথ বেছে নেয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের ওপর পাথর চাপিয়ে আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন? এত ভয় করেন কেন? ১০ বছরে বহু রক্তে রঞ্জিত হয়েছে আপনাদের হাত। তারা সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই মাটিতেই এই দুঃশাসক সরকারের একদিন বিচার হবে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা ও কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তো যেতেই চাই আমরা। কিন্তু কোন নির্বাচন? যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে না সেই নির্বাচনে? এরকম ভাঙালোক দিয়ে নির্বাচন হবে না। পুলিশ দেখলে যারা ভয় পায় এরা নির্বাচন পরিচালনা করবে কী করে?’
মির্জা ফখরুল নির্বাচনের আগে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- নির্বাচনের আগে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। সমস্ত নেতাকর্মীদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনা মোতায়ন করুন।’
ঐক্যের বিকল্প নেই জানিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে দানব সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় আরও বক্তব্য দেন- জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাসেমীর সভাপতিত্বে মতবিনিয় সভায় জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন