‘মিথ্যাচার ও গুজব রটনাকারীদের শক্তভাবে দমন করব। কিন্তু ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বন্ধ করে নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জানালাটা আমরা খোলা রাখার পক্ষে অবস্থান নেব। তবে সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য মূলধারার গণমাধ্যমকে সামাজিক মাধ্যমে আরো সক্রিয় হতে হবে।’
রোববার সকালে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম সেন্টার বাংলাদেশ (আইজেসিবিডি) ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
পিআইবির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ফেসবুকে গুজব এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি এবং সারাবাংলা ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সারাবাংলার নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন খান, বিএফইউজে‘র কোষাধ্যক্ষ ও নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদসহ অনেকেই।
ইনু বলেন, তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি কোনো অবস্থাতেই তথ্য চাপা দেওয়ার পক্ষে নয়। সুতরাং মূলধারার গণমাধ্যম নির্ভয়ে ঘটনার সঠিক বিবরণ তুলে ধরুন।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুজব রটনা ও মিথ্যাচারের বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিথ্যাচার ও গুজর রটানোর ক্ষেত্রে যতই ঝাপটা আসুক না কেন ? যত রকম বিভ্রান্ত ছড়ানো হোক না কেন ? তবে মিথ্যাচার গুজব রটনাকারীদের শক্তভাবে দমন করার পাশাপাশি ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জানালাটা খোলা রাখার পক্ষে সরকার। এই অবস্থান নিয়েই আমরা বাকিটা আলোচনা করবো।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক, টুইটারের গুজব থেকে কিভাবে নিজেকে দেশবাসীকে রক্ষা করবেন এই শিরোনামে ঈদের পর একটা প্রচার আন্দোলন হয়ে যাক। মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতি আমার আহবান আপনারা, আপনাদের জায়গা থেকে সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্যই এই প্রচারে সামিল হবেন”।
তিনি বলেন, তথ্যের উৎস যাচাই করে এই ব্যাপারে মূলধারার গণমাধ্যম এবং সরকারকে একমতে আসতে হবে। আমরা সম্প্রচার আইন, সম্প্রচার নীতিমালা, গণমাধ্যম নীতিমালা করার চেষ্টা করছি। আমরা যখন এগুলো নিয়ে কাজ করছি। তখন গণমাধ্যমে বিভাজন দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই সবাই একটা কাতারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে একমত হন যাতে গুজব রটনাকারীকরা গণমাধ্যমের পবিত্রতা নষ্ট করতে না পারে।
সারাবাংলা ও জিটিভি’র চিফ ইন এডিটর সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে বর্তমানে ফেইক নিউজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম প্রশাসনও এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুজবের সাথে মূলধারার গণমাধ্যমের লড়াইটা চলছে এবং চলবেই। সম্প্রতি গুজবের বিরুদ্ধে ৩শ পত্রিকা একযোগে আমেরিকায় সম্পাদকীয় লিখেছে। তিনি বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় চাপ সৃষ্টি করতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সম্প্রচার জগতকে ব্যবহার করতে হবে। আর সেটি করতে হবে সত্যিকারের খবর দিয়ে। একই সঙ্গে গুজব নিউজ বর্জন করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আরো বলেন, ফেসবুক নিউজের একটা ক্লু হতে পারে কিন্তু উৎস নয়। সরকারকে সঠিক তথ্যটা ভালভাবে সব জায়গায় প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, সত্যিকারের সংবাদই পারে সব ধরনের গুজব দূর করতে।
ইটিভি’র সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গুজব মোকাবেলা করতে হলে আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে কোনটা গুজব, আর কোনটা সংবাদ। প্রকৃত সংবাদ প্রকাশে বাধা দেয়া হলে সুযোগ সন্ধানীরা গুজব প্রচারের সুযোগ পায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় আমরা দেখতে পেলাম গুজব একটি সমাজকে কতটা ধাক্কা দিতে পারে। তাই আমাদের প্রকৃত সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে, সঠিক তথ্য দিয়ে গুজবকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সব সময় গুজবের পিছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মূল ধারার গণমাধ্যমকে আরো বেশি সক্রিয় করতে হবে।
পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর বলেন, গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। গুজব মোকাবেলা করতে গিয়ে সংবাদ প্রচার বন্ধ করে দেয়া, কোন সমাধান নয়। বরং এতে গুজবের আরো বেশি ডালপালা গজাবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক গুজব খুবই ভয়াবহ, শাপলা চত্বরের ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে ২০১৩ সালে চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করা হয়েছে। তখন বিভিন্নভাবে হুজুররা প্রচার করেছে শাপলা চত্বরের ঘটনা আড়াই হাজার লোক মারা গেছে। এগুলো বড় ধরনের গুজব। এইসব গুজব মোকাবেলা সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারাবাংলার এক্সিকিউটিভ এডিটর, মাহমুদ মেনন বলেন, বর্তমানে ফেইক নিউজ ফ্যাক্টরীটা এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে সেটা সাংবাদিকতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এক সময় হয়ত অজ্ঞতা প্রসূত কিংবা তথ্যর কোনো ভুলের কারণে কখনো কখনো সাংবাদিকতায় ভুল হতো। ওটা ছিল এক ধরনের ভুল, আর বর্তমানে যেটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে ফেইক নিউজ। এই নিউজটা কোন একটা ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে। আর তৈরি হচ্ছে এমনভাবে যাতে করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে, পরে তা ফেসবুকে সবার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, গুজব মোকাবেলা করতে অনলাইনে প্রচুর রিয়েল নিউজ দিয়ে ভরে দিতে হবে। যাতে করে মানুষ প্রচুর নিউজ পেতে পারেন। রিয়েল নিউজ যত বেশি প্রচারিত হবে গুজব তত বেশি পিছনে পড়ে যাবে। ফলে আমাদের সঠিক ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।
এছাড়াও সেমিনারে বক্তরা বলেন, গুজব মোকাবেলা করতে হলে আমাদের অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ দেয়া না হলে সমাজ গুজবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তাই, সঠিক সংবাদ মূলধারার সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমেই গুজবকে মোকাবেলা করতে হবে।
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন