আর ২টি মামলায় জামিন পেলেই কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না। এর মধ্যে কুমিল্লায় কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া কুমিল্লায় পেট্রোল বোমা হামলায় আট বাসযাত্রী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন রুলনিশি শুনানির মধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই মামলায় তিনি জামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তার মুক্তিতে বাধা কাটছে না। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে আরো ৩৪টি মামলার তথ্য আছে তাদের কাছে। এর মধ্যে ৩২টিতে তিনি জামিন পেয়েছেন, বাকি আছে ২টি। এসব মামলায় জামিন পেলেই তার কারামুক্তিতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।
ঢাকা ও নড়াইলের মানহানি মামলায় জামিন : মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগে ঢাকা ও নড়াইলে দায়ের করা পৃথক দুটি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার মানহানির মামলায় গতকাল মঙ্গলবার আর নড়াইলের মানহানির মামলায় গত সোমবার জামিন পান খালেদা জিয়া। বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ কামরুল হাসান খান।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এ মামলায় গত ৭ আগস্ট খালেদা জিয়ার আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন ঢাকার বিচারিক আদালত। অপরদিকে একই অভিযোগে নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে গত ৯ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। নড়াইল জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকী ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি সেদিন বলেন, আজকে বলা হয়, এত লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত লাখ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে। একাত্তরে আওয়ামী লীগ ‘স্বাধীনতা’ নয়, ‘ক্ষমতা’ চেয়েছিল দাবি করে ওই সভায় তিনি বলেন, তিনি (জাতির জনক) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং জাতির জনকের গৌরবজনক ভূমিকা নিয়ে খালেদা জিয়া উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়ে মানহানি করেছেন।
এদিকে যে দুটি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় আছেন খালেদা জিয়া, এর মধ্যে কুমিল্লায় কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় নি¤œ আদালতে আটকে থাকা খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সোমবার এ নির্দেশ দেন। এ মামলায় হাইকোর্ট এর আগে খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ ওই জামিন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টকে। ফলে নি¤œ আদালতকে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলায় আগের জামিন আর থাকল না বলে আইনজীবীরা জানান।
২০১৫ সালে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ হরতালের মধ্যে ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাতে খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার ইতিহাস : নি¤œ আদালতে রায় আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা বাদে ৩৪টি মামলা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। বাকি ৩০টি মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কট‚ক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের মতো অভিযোগ রয়েছে।
২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেন। এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। এ ছাড়া কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, এই ৩৪টি মামলার মধ্যে ১৯টি রয়েছে অভিযোগ গঠন বা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। ১২টি মামলা এখনো তদন্তাধীন। তিনটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সূত্র : ভোরের কাগজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন