Brac
ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ আংশিক) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনেও আলোচনায় আছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। হেভিওয়েট এ নেতাকে ঘিরেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বিকল্প না থাকায় গয়েশ্বরের পক্ষে একাট্টা স্থানীয় বিএনপি। তবে আইনি জটিলতায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার পুত্রবধূ অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি।
এর আগে এ আসনে প্রার্থী হয়ে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির আমানউল্লাহ আমান। বারবার মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েও প্রার্থিতার সুযোগ পাননি গয়েশ্বর। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে আমান ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী হন। এ সুযোগে ঢাকা-৩ আসনে প্রার্থিতার সুযোগ পান গয়েশ্বর। অবসান ঘটে তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। কিন্তু প্রথম নির্বাচনেই অংশ নিয়েই তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে পরাজিত হন। এ আসনটি গয়েশ্বরের জন্য বরাদ্দ হওয়ার খুশিতে প্রথমবারের পরাজয় নিয়ে খুব একটা গ্লানি নেই তার কর্মী-সমর্থকদের। অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি গয়েশ্বর।
আগামী নির্বাচনেও তিনি বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী। সাংগঠনিকভাবে এলাকায় শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। কেরানীগঞ্জের সল্ফ্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের সন্তান গয়েশ্বর শুরুতে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পরে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে দীর্ঘদিন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বারবার মনোনয়নবঞ্চিত হলেও ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর টেকনোক্র্যাট কোটায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পেলেও দলের যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। এরপর প্রায় এক দশক ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গয়েশ্বর।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিজ এলাকার তৃণমূলে শক্ত সাংগঠনিক ভিত গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পুত্রবধূর পাশাপাশি তার মেয়ে অ্যাডভোকেট অপর্ণা রায়ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। গয়েশ্বরের বিকল্প হিসেবে এ আসনে তাই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তার পরিবারের সদস্যদের নামই আলোচনায় উঠে আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজি নাজিম উদ্দিন মাস্টারের নামও শোনা যাচ্ছে।
২০০৮ সালের আগে একাধিকবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়। সীমানা পুনর্বিন্যাস করে এ আসনের আয়তন কমিয়ে আনা হলেও সাংগঠিনকভাবে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে দাবি নেতাকর্মীদের। তবে বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশের ভয়ে তাই নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মামলা-হামলার ভয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন দলে ভিড়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও এলাকায় মিছিল-মিটিং করতে পারেন না। এমন প্রেক্ষাপটেও আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, বিএনপি থেকে যাওয়া নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগে অসন্তোষ রয়েছে। 'হাইব্রিড' ওই নেতারা ক্ষমতাসীন দলে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। বিএনপির তৃণমূলও দলত্যাগীদের ওপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু সুযোগ পেলে ওই নেতারা আবার বিএনপির দিকে ঝুঁকবেন। নির্বাচনে আগে এমন কিছু ঘটলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আবারও চাঙ্গা হবে এবং ক্ষমতাসীন দল চাপে পড়বে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমকালকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে এ নিয়ে কথা বলবেন। এর আগে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে চান না। নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, এ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিকল্প নেই। তার বিরুদ্ধে এমন কোনো মামলা নেই, যে কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারলে বিএনপির পক্ষে নীরব ভোটবিপ্লব ঘটবে।
হাজি নাজিম উদ্দিন মাস্টার বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
অন্যান্য প্রার্থী : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সভাপতি ব্যবসায়ী হাজি সুলতান আহমেদ খানকে এ আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে ধর্মভিত্তিক এ দলটির অবস্থান মোটামুটি ভালো। বিশেষ করে কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন সামনে রেখে সুলতান আহমেদ খান মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হাতপাখা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দলের আমির ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের নিদের্শনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন