রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষেই মাঠে নেমেছিলেন দলের প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফা। এরপর প্রায় পাঁচ বছর এই দুই নেতাকে কখনো একসাথে দেখা যায়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এবার গভীর রাতে নাদিমের দুয়ারে গেলেন বুলবুল। তবে নাদিমের সঙ্গে বুলবুলের সে দেখা খুব একটা সুখের হয়নি বলেই জানা গেছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, এতোদিন দূরত্ব থাকলেও আসন্ন সিটি নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার কাছে ভেড়ার চেষ্টা করছেন বুলবুল। তাই দীর্ঘ পাঁচ বছর পর শনিবার গভীর রাতে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে নগরীর পাঠানপাড়ায় নাদিম মোস্তফার বাড়ি যান বুলবুল।
এ সময় বুলবুলকে স্বাগত জানান নাদিম। বেশ কিছুক্ষণ একসাথে সময় কাটান এই দুই নেতা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। মেয়র বুলবুল গত নির্বাচনের মতো এবারও তার পক্ষে নাদিম মোস্তফাকে নির্বাচনী মাঠে নামার আহ্বান জানান। তবে মাঠে নামার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানাননি নাদিম মোস্তফা। মাঠে নামাতে হলে বুলবুলকে কয়েকটি শর্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। শর্তগুলো পূরণের চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বুলবুল। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর মেয়র বুলবুল নাদিমের বাড়ি থেকে বিদায় নেন।
নাদিম মোস্তফার ঘনিষ্টজনেরা জানান, গত সিটি নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে মাঠে ছিলেন নাদিম মোস্তফা। বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের সাথে দেখা করলেও নাদিম মোস্তফার কাছে যাননি। এমনকি ফোন করেও কথা বলেননি। এরপর থেকেই আদালত চত্বর ছাড়া এই দুই নেতাকে আর একসাথে দেখা যায়নি। নাদিম মোস্তফার বাড়িতেও গত ৫ বছরে পা রাখেননি মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নাদিম মোস্তফার কোন খোঁজ খবরও নেননি।
দলীয় ওই সূত্র জানায়, বুলবুলের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত তোফাজ্জল হোসেন তপু জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর নাদিম মোস্তফার সমর্থকদের বাদ দিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিতে নাদিম মোস্তফা বিরোধীদের জায়গা দেয়া হয়েছে। নাদিমের নির্বাচনী এলাকায় দূর্গাপুর থানা বিএনপির কমিটিতে নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলার বাদীকে স্থান দেয়া হয়েছে। ওই মামলায় নাদিম মোস্তফার সাত বছরের জেলও হয়েছিল।
নাদিমের সমর্থকরা বলছেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বুলবুল নাদিম বিরোধীদের সাথে জোট বেঁধে কাজ করেছেন। বিষয়গুলো নাদিম মোস্তফাসহ তার অনুসারীদের অজানা নয়। এসব নিয়ে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষও বিরাজ করছে। ফলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে মেয়র বুলবুলের পক্ষে নাদিম মোস্তফা কতটা মাঠে নামবেন- তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর বুলবুল ও নাদিমকে শুধু একসাথে দেখা গেছে আদালত চত্বরে। পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলাসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় তারা আদালতে হাজিরা দিতে যান। তবে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে মেয়র বুলবুল এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফাকে গেল পাঁচ বছরে কখনও একসাথে দেখা যায়নি। এমনকি নাদিম মোস্তফা রাজশাহীতে অবস্থান করলেও কখনও এই দুই নেতা এক সাথে হননি।
হঠাৎ বুলবুলের আগমন নিয়ে জানতে চাইলে নাদিম মোস্তফা বলেন, শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিট। বুলবুল তার বাসায় যান। সেখানে তিনি রাত দেড়টা পর্যন্ত ছিলেন। এ সময় বুলবুল তাকে সিটি নির্বাচনে তার পক্ষে মাঠে নামার অনুরোধ করেন। তিনি বুলবুলকে তার বিরুদ্ধে করা নানা কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মেয়র বুলবুল কৌশলে তার কথাগুলো এড়িয়ে যান।
নাদিম মোস্তফা জানান, তিনি বুলবুলকে শর্ত দিয়েছেন যে, পুঠিয়া-দুর্গাপুরে তার অনুসারীদের বাদ দিয়ে যে থানা কমিটি করা হয়েছে, তা বিলুপ্ত করতে হবে। তবেই তিনি বুলবুলের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামবেন। বুলবুল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে যদি সিটি নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়- তবে তা তিনি পালন করবেন বলেও জানান নাদিম মোস্তফা।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, যেহেতু আমি প্রার্থী হচ্ছি। তাই সব নেতার কাছে যাওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি সব সিনিয়র নেতাদের সাথেই দেখা করে কথা বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় নাদিম মোস্তফার বাড়িতেও গিয়েছি। পাঁচ বছর তার বাড়িতে না গেলেও বিভিন্ন স্থানে আমাদের দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। আমাদের মাঝে কোনো সমস্যা নেই।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন