২৩ জুন আওয়ামী লীগ ৬৯ বছর পূর্ণ করছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রবীণ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটির ৭০-এ পা এদেশের রাজনীতির জন্য এক বড় ঘটনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। ইতিহাসের অনেক বাঁকেই আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশ যেন একাকার। ত্যাগ, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন তার সবচেয়ে সুখের সময় পার করছে। টানা ১০ বছর ক্ষমতায়। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষ কেবল ধরাশায়ী নয় রীতিমতো বিপর্যস্ত। দেশে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো রাজনৈতিক শক্তি নেই। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ কি আর আওয়ামী লীগ আছে?
আওয়ামী লীগ সম্ভবত উপমহাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যাদের জন্ম হয়েছে নিপীড়ন এবং নির্যাতনের মাধ্যমে। নিষ্পেষণ আর সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করে দলটি বিকশিত হয়েছে। যে দলটি একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েও শাসনক্ষমতায় থেকেছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর। যে দলের প্রধান আদর্শিক নেতা, জীবনের বেশিটা সময় কারান্তরে কাটিয়েছেন। সেই দলের নেতাদের আজ বিলাসী জীবন, চকচকে গাড়ি, বাহারি মুজিব কোট, জেল দেওয়া চুল।
আওয়ামী লীগ কি এখন সত্যিই আওয়ামী লীগ আছে?
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার এক তরুণ তাঁর উত্তাল আবেগ আর নেতৃত্বের গুণ দিয়ে হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের মধ্যমণি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক, তারপর সভাপতি, একসময় বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা। কোনো পৈতৃক পরিচয় নয়, কারও দয়ায় বা তদবিরে নয়, নিজস্ব ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে ডানপিটে তরুণ হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিশব্দ। বাংলাদেশের আরেক নাম। আজ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জিকির চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, এখনো গ্রামের কোনো অখ্যাত তরুণ তদবির, তেল, বাপ-মায়ের রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া শুধু নিজ যোগ্যতায়, উঠে আসবে নেতৃত্বের কেন্দ্রে? আওয়ামী লীগ কি আর আওয়ামী লীগ আছে?
আওয়ামী লীগ মানেই ভেসে উঠতো খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিচ্ছবি। ঘামে ভরা গ্রামের কৃষক, ক্লান্ত না হওয়া কারখানার শ্রমিক, হাড় জিরজিরে কিন্তু অদম্য মনোবলের সাহসী মাঝি। তরুণ স্বপ্নচারী ছাত্র, উদ্যত যুবক, যে তছনছ করতে চায় সব অনিয়ম। আর আজ? আওয়ামী লীগ মানেই ভেসে ওঠে কিছু তোষামোদি চতুর মুখ, কিছু সুবিধাবাদী চাটুকারের মতলবি হাসি, কয়েকজন উঠতি ধনীর বিত্তের বৈভব। আওয়ামী লীগের সেই সোনার মানুষ গুলোতো হারিয়ে গেছে নব্য লুটেরাদের চাপে। আওয়ামী লীগ কি আর আওয়ামী লীগ আছে?
আওয়ামী লীগ মানেই একসময় ছিল ত্যাগ আর উৎসর্গের বিবরণ। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে শুধু জনগণের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া। ৫২তে,৬২তে,৬৯এ,৭০এ,৭৫এ। তারপর, আজ আওয়ামী লীগ মানেই কিছু সুবিধাবাদী ধূর্ত মানুষ। লোভে চিকচিক চোখ, জলে ভেজা জিহ্বা। শুধু পাওয়ার আশায় বিভোর কিছু মানুষের মুখচ্ছবি। আওয়ামী লীগকে বলা হয়, জাতির পিতার আদর্শের দল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের চারপাশে যারা আছেন, তারা কজন হলফ করে বলতে পারেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তারা তাদের রাজনীতিতে মানেন। দীর্ঘ উদাহরণ আছে, উৎসাহীরাই খুঁজে দেখুন।
২৩জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটাই কামনা, আওয়ামী লীগ যেন আবার আওয়ামী লীগের মতোই হয়ে উঠে। কারণ, আওয়ামী লীগ ছাড়া জনগণের জন্য আর কে থাকে?
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন