নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নতুন নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী বাধা না থাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি)নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় এমপিসহ দলের শীর্ষ নেতারা মাঠে নেমেছেন। এতে অনেকটা হতাশা দেখা দিয়েছে নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে। তারপরও সমানভাবে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা। বসে নেই অন্য প্রার্থীরাও। প্রতিদিনই দলীয় প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শীর্ষ নেতারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সভা ও গণসংযোগ করছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন সিটি করপোরেশনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি, অফিস ও মিল কারখানায়। নানা কৌশলে তারা নির্বাচনি পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) মধ্যে। সবার দৃষ্টিই এখন এ দু’প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনি কার্যক্রমের দিকে।
শনিবার বিকেলে গাজীপুর প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারসহ (ধানের শীষ) গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন প্রার্থী অংশ নেন। প্রেস ক্লাবের সভাপতি খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। এসময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নির্বাচনকালে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী (নৌকা প্রতীক) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে টঙ্গীর কয়েকটি ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত একাধিক আলোচনা সভা, বৈঠক ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে তারা এক সঙ্গে ইফতার মাহফিলেও অংশ নেন। এসময় তারা স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী পাইলট স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে জালাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ খান এবং ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী (নৌকা প্রতীক) মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন,‘আমরা সবাই গাজীপুরকে আধুনিক নগরীতে পরিণত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করছি। আমার বিশ্বাস আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে খুলনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের বিজয় হবে।’
ইফতার পূর্ব এ আলোচনায় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর বলেন,‘আমি আপনাদেরই সন্তান। আমি আপনাদের পাশে আছি ভবিষ্যতেও থাকবো। আপনাদের সুখে-দুঃখে সব কিছুতেই আমি অংশীদার হতে চাই। আমি আপনাদের সেবা করার দায়িত্ব নিতে চাই। ’
এছাড়াও বিকেলে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়ার বাড়িতে দলীয় নেতা কর্মী ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইফতার ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
এসব অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী, টঙ্গী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, ২০ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার শনিবার টঙ্গীতে নিজ বাসভবনে নির্বাচনি কলাকৌশল নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিকেলে তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ধানের শীষের নির্বাচন মনিটরিং সেলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মহানগরের চাপুলিয়ায় স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ও শহরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিলে শরিক হন।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নিজের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভোটাররা নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে সিল মেরে আসবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হলে আল্লাহ ওপর ভরসা করে বলতে পারি আমি বিজয়ী হবো।’
বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রস ফায়ারের সমালোচনা করে বলেন,‘সবার মতামতের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এলাকাভিত্তিক মসজিদের ইমাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিতে হবে। কারণ, তারাই জানেন তাদের এলাকায় কারা মাদক ব্যবসা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সবার মতামতের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ীসহ সব অপরাধীদের স্তরে স্তরে বিন্যাস করতে হবে। এমন অনেকে আছে যারা পরিবর্তন বা সংশোধন হতে পারে, আবার কিছু আছে সংশোধনের সুযোগ পায় নাই, তাদেরকে সংশোধনের রাস্তায় আসার সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘আমি দীর্ঘদিন ধরে যে যুদ্ধের কথা বলে আসছিলাম দেরিতে হলেও এখন সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে এমন সময় যুদ্ধ শুরু হলো, যখন ঘরে আগুন লেগে গেছে। আপনার সন্তান যদি ভালো না থাকে তাহলে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে। আমি মনে করি, একটি বিরাট রাস্তার অথবা বিশাল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এলাকার চেয়ে একটি অনুন্নোত মাদকমুক্ত এলাকা অনেক ভালো।’
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান জানান, এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন