সরকারি অর্থ ব্যয় করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের কাছে আকুতি জানাতে দেশটিতে সফর করেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিদেশীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে স্বার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে ট্রানজিটসহ ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। তবে প্রতিদান হিসেবে ক্ষমতা ধরে রাখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। শুক্রবার শান্তি নিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবনে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা। বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন ট্রানজিটসহ সব দিয়েছে তাঁর সরকার, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই। গণমাধ্যমের খবরে এটা পরিষ্কার শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে ভারত যাননি, তিস্তার পানির জন্য যাননি, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে যাননি, তিনি গেলেন ক্ষমতায় টিকে থাকার দেনদরবারে।’
রবিবার (২৭ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিদেশীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজ দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এখন মুরুব্বীদের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। কারণ শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছেন তাদের দুঃশাসনের জবাব দিতে মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে। শেখ হাসিনার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে, দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে বন্দুকের জোরে আর ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যায় সারাদেশকে লাশের মিছিলে পরিণত করে, দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি আর দলীয়করণের মাধ্যমে গোটা দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে ঢুকিয়ে একটা অস্বাস্থ্যকর, জরাজীর্ণ, নানা অসুখ-বিসুখের উৎসস্থল অবাসযোগ্য কারাকক্ষের মধ্যে বাস করাতে বাধ্য করার পরও প্রধানমন্ত্রী এবার একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মনোবাসনা পূরণে নিরাপদ বোধ করছেন না। তাই তাদের চিরাচরিত আশ্রয়স্থল ভারতের শরণাপন্ন হয়েছেন শেখ হাসিনা আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে। এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যেখানেই গেছেন সেখানেই ব্যর্থ হয়েছেন।’
এসময় বিএনপির এই নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণে। অবশ্যই সেটি হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে না। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখতে চায়, বাংলাদেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ দু’দেশের বন্ধুত্ব হলো জনগণের সঙ্গে জনগণের। অতীতের মতো কলঙ্কজনক নির্বাচন সমর্থন করা ভারতের উচিত নয়। কিন্তু যদি বাংলাদেশের জনসমর্থনহীন একজন ব্যক্তি ও দলকেই বারবার তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় তাহলে বাংলাদেশের জনগণ মনে করবে ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায়। যেটি হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে আবারও পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই দেনদরবার ও আকুতি-মিনতি করে কোনো লাভ নেই, জনগণই সকল ক্ষমতার ধারক। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। বাংলাদেশের জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা নিশ্চিত করুন। নইলে জনগণের অধিকারের পক্ষে আমাদের উচ্চারণকে কখনোই থামাতে পারবে না অবৈধ সরকার। মিথ্যা কথার হানাদারিতে কাউকে প্রভাবিত করতে পারবেন না।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা গতকালও বলেছিলাম-সরকারের ইচ্ছা পূরণে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকে আমরা বলে আসছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী সরকারের ভোট জালিয়াতির বৈধতার রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে কাজ করছেন। দেশের ভোটাররা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সুষ্ঠু ভোটের শত্রুপক্ষ বলে মনে করে। এখন পর্যন্ত সিইসির সকল কার্যক্রম আওয়ামী স্বার্থের অনুকুলেই বাস্তবায়ন হয়েছে। ইতোপূর্বে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, নির্বাচন বিশ্লেষক, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যেসব সুপারিশমালা পেশ করেছিলেন সেগুলোর একটিকেও আমলে নেয়া হয়নি। ইসির কার্যকলাপে জনগণ মনে করে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দিয়ে বাংলাদেশে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ সিইসি এখন পর্যন্ত তার কার্যকলাপে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। জাতীয় নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে সিইসির অনুগত ভূমিকা ততোই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন