একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া, দলের প্রার্থী চ’ড়ান্তকরণ, ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করাসহ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র এক নেতা জানান, এখন রোজার মাস চলছে একারণে মনে হচ্ছে কর্মকান্ড হচ্ছে না। কিন্তু দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যে দলটি জনগণের সর্মথন নিয়ে বারবার ক্ষমতায় এসেছে সেই দলটি বসে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের এখন যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি তাহলো ম্যাডামের মুক্তি। এখানে কোনো আপোসের সুযোগ নেই। পাশাপাশি দলের ভেতরে তো কিছু কাজ আছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা করে থাকেন বা করছেন। দলের নিজস্ব কিছু বিষয়, কিছু কৌশল আছে যা প্রকাশ্যে হয় না। একারণে অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয়না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তো কখনও বলিনি নির্বাচনে যাবো না। আমরা তো বলছি বিএনপি জনগণের সর্মথনপুষ্ট নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কিন্ত আপনিই বলুন নির্বাচনের মত কোনো পরিবেশ কি দেশে আছে? নেই। আপনি দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল তার প্রধানকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে জেলে রাখবেন আর সেই দলটি নির্বাচনে যাবে? সেটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, তবে হ্যাঁ একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো প্রস্তুতি তো বিএনপির সব সময়ই আছে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির একাধিক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তিনশ’ আসনে প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে বিএনপির কোনো সমস্যা নেই। এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই হচ্ছে প্রথম। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনেরও দাবিতে রয়েছে। এসব আগে সমাধান করতে হবে। সরকারকে সংলাপে বসতে হবে। তিনি বলেন, দলের কিছু বিষয় থাকে যা প্রকাশ্যে বলা যায় না। ২০ দলীয় জোটের বাইরে যেসব দল বা জোট রয়েছে তাদের সঙ্গে নানা ইস্যুতে কথা হচ্ছে। এখানো তেমন কিছু বলার সময় আসেনি। সময় হলে তা আপনারা জানতে পারবেন।
আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমি মনে করি দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তবে আমাদের মূল দাবি তাহলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। এখন তার জামিনের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, দুটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে জরিপ চালায় বিএনপি। ওই জরিপে প্রায় ২৫০টি আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকা ভুক্ত কার হয়েছে। বাকী ৫০টি আসনে দলের চেয়ারপারসনসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম একক প্রার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। দলটির চেয়ারপারসন ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির প্রার্থী চ’ড়ান্ত করার আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গঠিত একাধিক টিম সারাদেশে প্রার্থী মনোনয়নে কাজ করবে। তাদের তালিকা আসারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়া ক্ষমতাসিন মহাজোটের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এসব রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ২০দলীয় জোটের বাইরে আলাদা প্লাটফর্ম করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে। যেসব রাজনৈতিক দলগুলো জামায়তকে নিয়ে ঐক্য গড়তে বাঁধা রয়েছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা মঞ্চ করার বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে যে এসব রাজনৈতিকদলগুলোর আলোচনা হয়েছে বা চলছে তা দেখা গেছে দলটির আয়োজনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ইফতারের আমন্ত্রণ জানানো এবং ওই ইফতারের বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাসদ, নাগরিক ঐক্য, এলডিপিসহ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা শরিক হন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন