বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তদবির ও তোষামোদ করে পদ পাওয়া যায় কিন্তু জনগণের সালাম পাওয়া যায় না। সুতরাং কাজে নেমে পড়ুন। কাজ করলে সালাম পাওয়া যাবে। তাতে পদ লাগবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির প্রয়াত নেতা এম শামসুল ইসলাম এবং জাগপার প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের ব্যানারে এ সভার আয়েজন করা হয়।
কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন নিয়ে আক্ষেপ করে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা জেল থেকে বের হওয়ার পর মনে হচ্ছে ভেতরেই ভালো ছিলাম। কারণ বের হয়েও তেমন কিছু করতে পারছি না। ভয়ের কারণে কথা বলি না আমরা।’
‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা যৌক্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, জেলখানায় বসে দেখলাম নির্বাচন নিয়ে আমাদের ব্যস্ততা। আরে নির্বাচন নিয়ে তো ব্যস্ততা থাকবেই। কারণ বিএনপি তো নির্বাচনের দল। দলের প্রতিষ্ঠাতা বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের মতো একদলীয় গণতন্ত্র না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর আগের পাকিস্তান সরকার আর বর্তমান সরকারের মধ্যে পার্থক্য নেই। তখনও মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি করত এখনো আমাদের ওপর গুলি করছে পুলিশ। বরং তাদের থেকে বেশি করছে। তাহলে পাকিস্তানি পুলিশ আর আমাদের পুলিশের মধ্যে তফাত কোথায়? এরা জনগণের সেবক। কিন্তু তারা জনগণের সঙ্গে খবরদারি করে আর শেখ হাসিনার কাছে গেলে দলীয় লোকের মতো আচরণ করে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খুলনার নির্বাচন আমি নিজে মনিটরিং করেছি। সত্য কথা বলেছেন। আবার বলেছেন, আমার ভাই (চাচাতো) শেখ হেলালও মনিটরিং করেছে। তার মানে ইসির ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
সরকারবিরোধী এই নেতা বলেন, খুলনার নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আমাদের একটা বার্তা দিয়েছেন। এটা বুঝতে পারলে ভালো, না বুঝতে পারলে আমাদের বিপদ আছে।
গয়েশ্বর বলেন, শেখ হাসিনা অনেক শক্তিশালী সেটা আমি মনে করি না। তবে তার পেছনে যে শক্তি কাজ করে অনেকে বলেন ইন্ডিয়ার কথা। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক সম্পর্ক করার কথাও বলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা আর ইন্ডিয়ার মধ্যে তো ভালো সংসার চলছে। সেই সংসারে ভাঙন ধরানো কি ঠিক হবে? সেই চেষ্টার থেকে বড় চেষ্টা হওয়া উচিত ভারতকে পরিষ্কার করতে হবে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে কি না? তারা মনে করে কি না যে বাংলাদেশের মানুষ এই দেশের মালিক। যদি সেটা মনে করে তাহলে দেশের মানুষের কাছে সব থেকে অপছন্দের মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ থেকে তাদের বিরত থাকা দরকার। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। কিন্তু তাই বলে খবরদারি কেন করবে? আমাদের দেশের সরকার কে হবে তা জনগণ পছন্দ করবে। ভারতের সরকার তো সে দেশের জনগণ পছন্দ করে। সেটা তো শেখ হাসিনা পছন্দ করে দেয় না। তাই ভারতকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে তারা তাদের নীতি পরিবর্তন করবে কি না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দুর্দশার জন্য শেখ হাসিনাসহ কার কার দায় আছে বিশ্ববাসীকে আমাদের তা জানাতে হবে। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কথা।’
দেশে পরিবর্তন হবেই এমন দাবি করে তিনি বলেন, সেই পরিবর্তনে আমাদের ভূমিকা কতটুকু থাকবে সেটা বিষয়। কিন্তু পরিবর্তন হবেই।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা কৃষিবিদ মেহিদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন