গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের অভিভাবক সমাবেশ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।
জাহাঙ্গীরের এই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও করেছেন হাসান। তার দাবি, এসব কর্মসূচির আড়ালে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে জাহাঙ্গীরের প্রচার সেলের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলম এবং ওই অভিভাবক সমাবেশের উদ্যোক্তা জানান, সেখানে ভোট নিয়ে কোনো কথাই হয়নি।
গত ১৫ মে খুলনার সঙ্গে গাজীপুরেও ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজের আবেদনে গত ৬ মে ভোটে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর প্রথমে হাসান, পরে জাহাঙ্গীর এবং সব শেষে নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানির পর ১০ মে সে স্থগিতাদেশ তুলে দেয়া হয়।
তবে নির্বাচন কমিশন রোজায় ভোট নিতে চায় না। তারা ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে ২৬ জুন। আর নতুন করে তফসিল ঘোষণা না করেই এই ভোট নেয়ার ঘোষণা এসেছে। আর এই ভোটের নয় দিন আগে ১৮ জুন থেকে প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন।
এমনিকে প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় দেয়া হয়। ভোটের দুই দিন আগে মধ্যরাতে শেষ হয় এই প্রচার। গত ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করা প্রার্থীরা ১২ দিন প্রচার চালিয়েছেন। বাকি সাত দিন সুযোগ পাবেন তারা।
এই প্রচার শুরুর বাকি এখনও প্রায় এক মাস। এই দীর্ঘ সময় ভোটারদের মানসপটের বাইরে থাকতে রাজি নন প্রার্থীরা। তারা ভোটের প্রচার না চালালেও নানা সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। অথবা অন্য কোনো সুযোগে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
এর মধ্যে ২১ মে সোমবার নগরীর ৫৪ নং ওয়ার্ডে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে ‘অভিভাবক সমাবেশ’ করেন জাহাঙ্গীর। এরপর তিনি টঙ্গী এলাকার আরও দুটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর এই ধরনের কর্মসূচি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী।
অভিযোগে হাসান বলেন, হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী ও তার পক্ষে এসব নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা’র ৩, ৪, ৫, ২২ ও ২৪ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগের অনুলিপি ই-মেইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়েও পাঠিয়েছেন হাসান।
সোমবার ‘অভিভাবক সমাবেশে’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক, শিক্ষক প্রতিনিধি আবু জাফর আহমেদ, বাবু প্রদীপ কুমার অধিকারী, শাহাবউদ্দিন সজীব, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এম এম হেলালউদ্দিন বক্তৃতা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি দেয়ার অঙ্গীকার করেন জাহাঙ্গীর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, তাদেরকে নির্বাচনী সভার কথা বলা হয়নি। জরুরি অভিভাবক সমাবেশের কথা বলে স্কুলে নেয়া হয়েছে। এদিন স্কুলে পাঠদানও বন্ধ রাখা হয়। সভায় একটি নির্ধারিত ছকে অভিভাবকদের নাম, সই ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়।
হাসানের অভিযোগ, ভোটারদের সই জাল করে জালভোট প্রয়োগসহ অসৎ উপায় অবলম্বনের জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার স্কুলে কোনো নির্বাচনী সভা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে দেখা করতে ও দোয়া চাইতে জাহাঙ্গীর আলম স্কুলে এসেছিলেন।’
জাহাঙ্গীর আলমের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সোমবার দিনব্যাপী মহানগরের টঙ্গীতে ৫৪, ৫৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাহাঙ্গীর আলম।’
‘তিনি (জাহঙ্গীর) সকালে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে, দুপুর আড়াইটায় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং বিকালে একই ওয়ার্ডের নওয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে মত বিনিময় করেন।
‘বিকালে টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের পিনাকি গার্মেন্টসে শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সন্ধ্যায় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।’
এসব আয়োজনে কোথাও ভোটের প্রসঙ্গ আসেনি জানিয়ে জাহাঙ্গীরের মিডিয়া সেলের প্রধান বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী অকারণে অভিযোগ করেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করেছেন।’
জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ’১৮ জুনের আগে কোনও প্রার্থী বাইরে গিয়ে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা বা গণসংযোগ করতে পারবেন না। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও নির্বাচনী বক্তব্য বা ভোট চাইতে পারবেন না।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন