গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামা মহানগর জামায়াতের আমির এস এম সানাউল্লাহ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে হাসানউদ্দিন সরকারের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না বিএনপির মেয়র প্রার্থী। কারণ ভোটের মাঠে মিনার প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে আছেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমান। তিনি আবার কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক বহুল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামীর গাজীপুর জেলা শাখার আমির।
গাজীপুর সিটির ২০১৩ সালের নির্বাচনেও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ফজলুর রহমান। পরে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধা্ন্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন এবং ধানের শীষের প্রার্থী এম এ মান্নানের পক্ষে প্রচারণায় নামেন ফজলুর রহমান। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট বের হয়ে আসায় এবার ভোটের মাঠে মিনার প্রতীক নিয়ে তিনি ধানের শীষের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।
আসন্ন সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকার ও তার সমর্থকদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে ওঠেছেন এই ফজলুর রহমান। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্ধী চেয়ে তারা বড় করে দেখছেন তার জেলা হেফাজতের আমির পরিচয়টি। ভোটের মাঠে তার পক্ষে নেমেছেন হেফাজতের কর্মী ও সমর্থকরা। ধর্মীয় মুল্যবোধের জিকির তুলে কাওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বেশ কিছু ভোট টেনে নিবে মিনার মার্কা বাক্সে। হেফাজতের ‘সংরক্ষিত’ এইসব ভোট গতবার ধানের শীষের এমএ মান্নান পেলেও এবার তা পড়বে আলাদা বাক্সে।
নির্বাচনের হাওয়া অনুযায়ী গাজীপুরে নৌকা অার ধানের শীষের অবস্থান প্রায় সমানে সমান। ভোটযুদ্ধে অা.লীগ আর বিএনপি কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। যে দলের প্রার্থীই জয়ী হোক না কেন, ভোট ব্যবধানটা বড় না হওয়ার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মিনার মার্কার ফজলুর রহমান তথা হেফাজতের রিজার্ভ ভোট ধানের শীষের জন্য একটা বড় হুমকি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধাপরাধাীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের ‘নাস্তিক’ দাবি করে ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল হেফাজত। এক পর্যায়ে সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা দেয়। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর ছাড়তে বাধ্য হয়। ওই রাতে হেফাজত কর্মীদের হটাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে সে সময় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর গুজব ছড়ায় আর সেটি সরকারের জন্য তীব্র চাপ তৈরি করে। এর কয়েক মাস পরেই খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
ওই নির্বাচনে হেফাজত অনুসারীদের শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে ‘বিকৃত তথ্য’ ও আবেগী বক্তব্য তখন ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে বলে ধারণা করা হয়। হেফাজত নেতারা ওই নির্বাচনের আগে ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারেই মাঠে নেমে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামে। এর সুফলও পান চার সিটির ধানের শীষের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে দেড় লাখ ভোটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির অধ্যাপক এম এ মান্নান।
আগামী ১৫ মের নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান ভোটের মাঠে থাকায় হেফাজতের সমর্থক -ভক্তদের ভোট পাচ্ছেন না হাসান উদ্দিন সরকার । দেশের অন্যান্য এলাকার মতো গাজীপুরেও বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসা রয়েছে এবং তাদের ছাত্র-শিক্ষক এবং অনুসারীদের উল্লৈখযোগ্য সংখ্যক ভোট আছে। আবার মসজিদ মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের একটি বড় অংশই নিশ্চিতভাবে ফজলুর রহমানের পক্ষেই কাজ করবেন ও ভোট দেবেন। বিষয়টি বিএনপি প্রাথী হাসান উদ্দিন সরকারের কপালের রেখাকে চওড়া করে তুলেছে, চিন্তিত স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম অবশ্য এদিকে থেকে ঝুঁকিমুক্ত। গতবারের নির্বাচনে হেরে যাওয়া আজমত উল্লাহ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক জাসদের প্রার্থীও জাহাঙ্গীরের সমর্থনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহর করে নিয়েছেন। কাজেই ১৪ দলীয় জোটের ভোটে ভাগিদার থাকছে না কোনো প্রার্থী। কিন্তু গতবারের বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ভোটের একটা অংশ চলে যাচ্ছে মিনার মার্কায়। বিষয়টি খানিকটা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে হাসান সরকার ও ধানের শীষের সমর্থকদের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর পাশে ১১ লাখেরও বেশি ভোটার অধ্যুষিত গাজীপুর সিটির ভোটযুদ্ধে নজর থাকবে সারাদেশের। কারণ, জনসমর্থন একটা চালচিত্র পাওয়া যাবে এখানে থেকে। জানা যাবে জনগণের কাছে কোন দলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন