বিদেশের মাটিতে কোনো দেশের নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রমাণের একমাত্র বৈধ উপায় পাসপোর্ট। যেটা বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়রম্যান তারেক রহমানের নেই। তার ওপর মেয়াদ শেষের প্রায় পাঁচ বছর হলেও পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন না করায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট গ্রহণে তারেক রহমানের অনীহা দেখছেন ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়ের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন।
দোলন বলেন, ‘২০১৩ সালের পর তারেক রহমান যখন সৌদি আরবে সফর করেছেন তখন তার কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল না। তাহলে নিশ্চয়ই তিনি অন্য কোনো দেশের বৈধ পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ট্রাভেল করেছেন।’
‘বাংলাদেশের কোনো পাসপোর্ট যে তার হাতে ছিল না এটা তো পরিষ্কার। তাহলে কীভাবে তিনি গেলেন এটা তো বিএনপিকে পরিষ্কার করতে হবে।’
সোমবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরে আয়োজিত নিউজরুম সংলাপ অনুষ্ঠানে ঢাকাটাইমস পত্রিকার সম্পাদক এসব কথা বলেন।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী।
২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান, এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
এর মধ্যে তারেক রহমানের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। আর ২০১৪ সালের ২ জুন তারেক রহমান, স্ত্রী জোবাইদা ও মেয়ে জাইমার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জমা দেন। তার সেই পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
গত পাঁচ বছরেও তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট নবায়নে বা হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেননি।
গত শনিবার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সবুজ পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
এরপর সোমবার জবাব চেয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠান তারেক। নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে হয় বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে, নয়তো ক্ষমা চাইতে হবে। এর কোনোটিই না করলে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
একই দিন সন্ধ্যায় গুলশানের নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেওয়া সংক্রান্ত একটি কাগজ উপস্থাপন করেন শাহরিয়ার আলম।
তারেক রহমানের পাসপোর্ট ‘সারেন্ডারের’ (সমর্পণ) বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয় নিউজ টোয়েন্টিফোরে আয়োজিত নিউজরুম সংলাপ অনুষ্ঠানে।
সংলাপে ঢাকাটাইমস সম্পাদক দোলন বলেন, দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটি দলের বর্তমান প্রধান তারেক রহমানের পাসপোর্ট ইস্যুতে তার দায়িত্বশীলতার কোনো পরিচয় দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
‘যে কিনা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি এখন দেশের নেতৃত্ব দেয়ার চিন্তা করছেন, সে রকম একজন নেতার নিজের দেশের পাসপোর্টই গ্রহণ করতে অনীহা, তার কাছে কি দেশের নেতৃত্ব নিরাপদ?’ এমন প্রশ্নও রেখেছেন গণমাধ্যমের অন্যতম এ সদস্য।
দোলন বলেন, ‘আমি তো বলব তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট গ্রহণেরই অনীহা আছে। যদি তা না-ই হতো তাহলে তিনি পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনই কেন করেননি? আবেদনের পর সরকার খারিজ করেছে, যদি এমন হতো তাহলে তো এটা বিএনপির বড় রাজনৈতিক প্রচারণা হতো। কিন্তু তিনি তো কোনো আবেদনই করেননি।’
ঢাকাটাইমসের সম্পাদক মনে করেন বিদেশে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার একটাই উপায়- পাসপোর্ট। ‘আপনি বাইরের দেশে যাবেন। সেখানে তো পাসপোর্টটাই একমাত্র প্রমাণ ও বৈধ ডকুমেন্ট।’
অনুষ্ঠানের অপর অতিথি সিনিয়র সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর কাছে একই বিষয়ে সঞ্চালক জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে সরকার এখানে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের গণি বলেন, ‘আমার মনে হয় মন্ত্রী মহোদয় ওই চিঠিটি পড়েননি। সেই চিঠিতে বলা আছে পাসপোর্টের ফটোকপিটি জমা রাখার জন্য। নাগরিকত্ব বর্জনের কথা সেখানে কোথাও কি তারেক রহমান বলেছেন?’
তারেক রহমানের পাসপোর্ট ইস্যুটি রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজি বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘পাসপোর্ট নাগরিকত্বের কোনো সনদ নয়, এটা ট্রাভেল ডকুমেন্ট। বিদেশে গেলে এটা লাগবেই। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে কম পক্ষে ১৫ কোটির পাসপোর্ট নেই, তারা কি এ দেশের নাগরিক নয়?’
সঞ্চালক তারেক রহমানের নাগরিকত্বের প্রমাণ কি? ওনার তো স্মার্টকার্ডও নাই, প্রশ্ন রাখলে এই সাংবাদিক বলেন, ‘স্মার্ডকার্ড যখন করা হচ্ছে তখন তো তিনি বাংলাদেশে নাই। উনি আবেদন করেছেন কিন্তু ওনাকে পাসপোর্টটা রিনিউ করতে দিচ্ছে না গভমেন্ট। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় পড়ে আজকে উনি দেশের বাইরে আছেন। এখানে সরকার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কথা বলছে।’
‘সরকার তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিচ্ছে না।’
এ সময় দোলন প্রশ্ন রেখে কাদের গণিকে বলেন, ‘তারেক রহমান কি দেশে আসার চেষ্টা করেছেন কখনো? এখন যদি কেউ বলেন, মামলায় বিচারের কাঠগড়াতে তাকে যন দাঁড়াতে না হয়, বাংলাদেশে আসতে না হয়, এ সাবিধা গ্রহণ করার জন্যই তিনি অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বললে এর ডিফেন্স কী?’
তারেকের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ রয়েছে, যেমন- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে শতাধিক মামলার ১০টিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পাশাপাশি একাধিক দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ডের রায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
‘এগুলোতো রাজনৈতিক বক্তব্যে প্রামণ হবে না, প্রমাণ হবে আদালতে। দেশে এলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তাকে আদালতে দাঁড়াতেই হবে।’ বলেন দোলন।
সাপ্তাহিক ‘এই সময়’-এর সম্পাদক দোলন প্রশ্ন রাখেন, ‘২০১৩ সালের পর তারেক রহমান নবায়ন চেয়েছেন এবং সেটা খারিজ করা হয়েছে এমন কোনো খবর কোথাও কি প্রকাশিত হয়েছে? বিএনপি বা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কি কখনো বলা হয়েছে?’
এ সময় দোলন বলেন, ‘২০১৮ সালে এসে যখন জানা যাচ্ছে যে তারেক রহমানের পাসপোর্টই নেই তখন বিএনপি নানা ধরনের ছল-চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে।’
(ঢাকাটাইমস/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন