পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বর্জনের দাবি করে ‘অদ্ভুত’ সব তথ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়েছেন বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নাগরিকত্ব বিষয়ে তিনি অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন। আমরা তার এই অপতৎপরতার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কি কি কারণে এক ব্যক্তি তার জন্মসূত্রে পাওয়া নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, সেটা শাহরিয়ার আলম বলেননি। এটাও যিনি জানেন না, তার মত ব্যক্তির প্রতিমন্ত্রী পদে থাকা জাতির জন্য লজ্জাজনক।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্য-বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিক, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতই তারেক রহমান সাময়িকভাবে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চান এবং সঙ্গত কারণে তা তিনি পেয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন তারেক রহমান। দেশটির প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট জমা রেখে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। এজন্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যখন দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন এবং তা অর্জন করবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণিত হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।’
তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে ‘প্রলাপ’ এবং ‘অপপ্রচার’ অবিলম্বে বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তারেক রহমান যে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন, জনগণ তার জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছেন। জনগণের কষ্টার্জিত বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরে প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র অর্জন তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক চিঠির ফটোকপি। কি বিচিত্র এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল!’
তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈন ইউ সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় ২০০৮ সালে জামিনে তারেক রহমান লন্ডনে যান। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনো তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতা-পাতি নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন। কিন্তু, এসবের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের জবাব যেন জনগণ শুনতে না পারেন, সেজন্য দেশের স প্রচার মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন আইন ২০০৪ এর ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে- পাসপোর্ট অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারও কাছে যাবে না। শুধুমাত্র যিনি এটার হোল্ডার তার কাছে যাবে। থার্ড পার্টি এটি নিতে পারবে না। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন পাসপোর্ট হাইকমিশনে দেয়া হয়েছে, তা রহস্যজনক ও সন্দেহজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলছি, ব্রিটিশ আইন সেকশন ১৭ অনুসারে তারেক রহমানের পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন