আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধের আগেই নির্বাচন জমে উঠতে শুরু করেছে। প্রার্থীরা প্রতিদিনই ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন আচরণবিধি লংঘন করে বেশ কয়েক প্রার্থী গণসংযোগ করছেন। অঘোষিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সবার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালালেও একাধিক প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা তা মানছেন না। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধের আগেই কয়েক প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রতীকসহ নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার নির্বাচনী এলাকায় ও ভোটারদের মাঝে বিতরণ করেছেন। বিশেষ করে মেয়র পদে বড় দুইদল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলছেন অন্যরা।
এব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে ইতোমধ্যে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কানাইয়া এলাকায় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক মেয়র প্রার্থীর সমর্থনে বুধবার মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোকসমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে এলে বৃহষ্পতিবার আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পত্র দেয়া হবে বলে সন্ধ্যায় নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল জানিয়েছেন।
এদিকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাইকালে বাতিল হওয়া ২৩ প্রার্থীর মধ্যে আপীলের মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ৩জনসহ মোট ১৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালে ১৯টি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে মোট ৮৪জন নারী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ ও ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে আপীলের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ওই ৩জন বৃহষ্পতিবার তাদের প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এদের মধ্যে কেই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নি। নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসব নারী প্রার্থীদের মধ্যে ৭১শতাংশ শিক্ষিত। বাকিরা স্বাক্ষরজ্ঞান ও অন্যান্য শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ গৃহিনী, ২১শতাংশ ব্যবসায়ী এবং ১৬.৬৬ শতাংশ হলেন চাকুরিজীবী।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ১১ লাখ ৩৭ হাজার ১১২ জন। সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন ওয়ার্ডে একজন করে নারী কাউন্সিলর থাকেন। এই হিসাবে গাজীপুরে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের হলফনামা ছাপিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিলি করা হবে।
নির্বাচনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬জন হলেন স্নাতকোত্তর, ৬জন এলএলবি ও ৫জন স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। এছাড়াও অপর ৭জন এইচএসসি, ১০জন এসএসসি, ২জন ১০ম শ্রেণী ও ২৪জন ৮ম শ্রেণী পাস করেছেন। অন্যরা অন্যান্য দিক্ষায় দিক্ষিত।
১০নংওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত আসনের এবারের প্রার্থী ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোসা. আয়েশা আক্তার বলেন, সিটি কর্পোরেশনে কাউন্সিলরদের উচ্চ শিক্ষা থাকলে বিভিন্ন কাজ-কর্ম করতে সুবিধা হয়। কারণ এখানে বিদেশী অনেক প্রকল্পের কাজ আমাদের করতে হয়। বাইরের দেশের ওইসব প্রকল্প কর্মকর্তারা বাংলা বুঝেন না। তারা সভায় বক্তব্য রাখেন ইংরেজীতে।
অল্পশিক্ষিতরা ওইগুলো বুঝেন না। এরজন্য তাদের অন্যের দ্বারস্ত হতে হয়। এছাড়া মোবাইল কিংবা ই-মেইলে অনেক তথ্য ইংরেজীতে আসে। শিক্ষা না থাকলে তারা নিজে কিছু বুঝতে পারেন না। অন্যে যা বুঝায় তাই তাকে বুঝতে হয়, এতে সময় ও কষ্ট দুই-ই বেশি হয়। বিচার-শালিস, আইনের ধারা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কম শিক্ষিতদের বেশি ভোগান্তি হয়। তাই ভোটারদের সিটি নির্বাচনে শিক্ষিত ও সচেতন প্রার্থীদের ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তিনি সরকারের প্রতি কাউন্সিলর পদে শিক্ষিত লোক প্রার্থী হওয়ার আইন করার দাবি জানিয়েছেন।
স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ৫নং ওয়ার্ড বর্তমান নারী কাউন্সিলর মোছা. বকুল আক্তার জানান, গত নির্বাচনে জনগণের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি। এবারও আমি প্রার্থী হয়েছি। লেখাপড়া কম থাকলেও আমি জনগনের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি। জনগণও আমাকে ভালভাসে। তাই এবারও আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমি ইংরেজি বলতে-পড়তে না পারলেও আমার বিএ পাস সচিব রয়েছে। তিনি আমাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। এতে আমার কোন সমস্যা হয়না। এখানে জনগণের কাজ করার মানসিকতাই বড় কথা। তবে নিজে শিক্ষিত থাকলে নিজের কাজ নিজেই করা সম্ভব হয়।
সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পেশা ও শিক্ষা
১নং ওয়ার্ডে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে একজন এইচএসসি, দুইজন ৮ম শ্রেণী ও ২জন স্বশিক্ষিত। একই সংখ্যা ২নং ওয়ার্ডেও। তাদের মধ্যে ২জন এইচএসসি, একজন অষ্টম শ্রেণী ও দুইজনের শিক্ষা অন্যান্য। তাদের মধ্যে দুইজন ব্যবসায়ি ও তিনজন গৃহিনী। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন এসএসসি, একজন ১০ম শ্রেণী ও একজন ৮ম শ্রেণী পাস করেছেন। এদের একজন গৃহিনী ও দুজন ব্যবসায়ি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা-৪। এখানে একজন স্বাক্ষর, একজন এসএসসি, ও দুইজন ৮ম শ্রেণী পাস। তাদের একজন চাকুরি ও দুইজন ব্যবসা করেন এবং একজন গৃহিনী। ৫নং ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা-৬।
তাদের মধ্যে একজন স্নাতক ও দুইজন ৮ম শ্রেণী পাস করেছেন এবং তিনজনের স্বাক্ষরজ্ঞান রয়েছে। এ আসনের প্রার্থীদের একজন ব্যবসায়ি অন্যরা সকলেই গৃহিনী। ৬নং ওয়ার্ডে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে দুইজন একজন মাস্টার্স, দুইজন এইচএসসি, একজন এসএসসি এবং একজন ৫ম শ্রেণি পাস করেছেন। অন্যজনের স্বাক্ষরজ্ঞান রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন চাকুরিজীবী (কন্ঠশিল্পী), একজন ব্যবসায়ি ও ৫জন গৃহিনী। ৭নং ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী। এ ওয়ার্ডের সবাই গৃহিনী। ৮নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা-৭জন। এদের মধ্যে দুইজন এলএলবি, একজন এসএসসি ও দুইজন ৮ম শ্রেণি পাস করেছেন এবং দুইজন স্বশিক্ষিত।
তাদের দুইজন চাকুরিজীবী,একজন ব্যবসায়ি, চারজন গৃহিনী। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা-৫। তাদের মধ্যে একজন ৮ম শ্রেণি, একজন এলএলবি, একজন একজন সম্মান, এইচএসসি, একজন ৮ম শ্রেণী পাস করেছেন এবং একজন স্বাক্ষর বৈশিষ্ট। তাদের মধ্যে একজন চাকুরিজীবী, একজন ব্যবসায়ি ও তিনজনই গৃহিনী। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে একজন এলএলবি, দুইজন অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। তাদের একজন চাকুরিজীবী ও দুইজন ব্যবসায়ি। ১১নম্বর ওয়ার্ডে চার প্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে একজন এসএসসি, অন্য তিনজনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত।
তাদের একজন ব্যবসায়ি এবং অন্য তিনজন গৃহিনী। ১২নম্বর ওয়ার্ডে চার জন প্রার্থীর মধ্যে একজন এইচএসসি, বাকিরা স্বশিক্ষিত। এ ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সকলেই গৃহিনী। ১৩নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন তিনজন, তাদের মধ্যে দুইজন মাস্টার্স ও একজন এসএসসি। একজন চাকুরিজীবী ও দুইজন গৃহিনী। ১৪নম্বর ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন এলএলবি, একজন এইচএসসি ও একজন এসএসসি।
তাদের মধ্যে একজন চাকুরিজীবী, একজন গৃহিনী ও একজন ব্যবসায়ি। ১৫নম্বর ওয়ার্ডে ৬জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা মধ্যে একজন মাস্টার্স, একজন স্নাতক, একজন ৮ম শ্রেণি ও তিনজন স্বশিক্ষত। তাদের মধ্যে একজন চাকুরিজীবী (সাংবাদিক), একজন ব্যবসায়ি ও বাকিরা গৃহিনী। ১৬নম্বর ওয়ার্ডে ৫প্রার্থীর মধ্যে একজন এলএলবি, একজন স্নাতক, একজন এসএসসি, ও দুইজন অষ্টম শ্রেণি।
তাদের একজনের পেশা চাকুরি অন্যরা হলেন গৃহিনী। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চার প্রার্থীর মধ্যে স্নাতক ১জন, ১০ম শ্রেণি ১জন ও ৮ম শ্রেণি ২জন। তাদের একজনের পেশা গৃহিনী, একজন চাকুরিজীবী ও দুইজন ব্যবসায়ি। ১৮নম্বর ওয়ার্ডে তিনজনের মধ্যে দুইজনের শিক্ষা মাস্টার্স ও একজন স্নাতক, তাদের তিন জনেরই পেশা চাকুরি এবং ১৯নম্বর ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থীর মধ্যে দুইজন এসএসসি ও দুইজন ৮ম শ্রেণিপর্যন্ত। তাদের মধ্যে তিনজন গৃহিনী একজনের পেশা ব্যবসা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন