নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানকে কাঁদালেন সদ্য অন্ধত্ব বরণ করা এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আজ রবিবার বিকালে ফতুল্লার মিছির আলী ডিগ্রি কলেজে এ ঘটনা ঘটে। দীপ্ত নামে ওই শিক্ষার্থীর কথা শুনে সানগ্লাস খুলে চোখ মুছতে থাকেন শামীম ওসমান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই কলেজটির ৩ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করতে যান এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে নানা সমস্যার কথা শুনছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাব দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের গান শোনান পরে গান গাওয়ান। আনন্দঘন এক পরিবেশ চলাকালীন ওই কলেজের এক শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার্থী দীপ্ত হাজির হয়। সম্প্রতি ব্রেন স্ট্রোক করে দু'চোখ অন্ধ হয়ে যায় দীপ্তর। তবুও সে পরীক্ষা দিতে চায়।
দীপ্তর মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে একটি গান গাইতে চায়। শামীম ওসমান ছেলেটির গান শোনেন আর কাঁদতে থাকেন। এক পর্যায়ে দীপ্ত মাইকে সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে আমার অনেক বন্ধুরা আছে। আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তবে একটি কথা বলি বন্ধুরা। বিপদের সময় অনেককে পাওয়া যায় না। যখন বিপদ ছিল না অনেক বন্ধু ছিল। আজকে অনেকেই নেই। কোন দিন কোন গার্লফ্রেন্ডকে বিশ্বাস কর না। মনে রাখবা বন্ধুরা গার্লফেন্ড তোমাকে বিপদে পড়লে ঠিকই ছেড়ে যাবে। মা কোন দিন ছেড়ে যাবে না।
বক্তব্য শেষে শামীম ওসমান বলেন, আমার মা মারা গেছে কষ্ট পেয়েছি। ভাই মারা গেছে কষ্ট পেয়েছি। বাবা মারা গেছে কষ্ট পেয়েছি। জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছি। কিন্ত আমি সহজে নিজের কষ্টের কথা বলি না। আজকে বলব। আমি আজকে খুব কষ্ট পেয়েছি। তবে সাহসও পেলাম। আমি মনে করতাম আমি সাহসী। কিন্তু দেখলাম আমার চেয়ে সাহসী দীপ্ত। যে কলেজে দীপ্তর মত ছেলে আছে, সে কলেজে আমি বারবার আসব। চোখ দু'টি অন্ধ হয়েও দীপ্ত থেমে যেতে চায় না, ও এগিয়ে যেতে চায়।
তিনি বলেন, আপনারা শেখ হাসিনাকে দেখুন। তিনি মমতাময়ী। পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাছ থেকেই শিখেছি মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। আজ দীপ্তর মত মানুষের পাশেই শেখ হাসিনা দাঁড়িয়েছেন। আমি দীপ্তর সকল চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে চাই। যদি তার মায়ের কোন সমস্যা না থাকে। আজ থেকে দীপ্ত আমার বোনের ছেলে। এ কথা বলেই শামীম ওসমান চোখ মুছতে থাকেন।
দীপ্তর মা লাবনী আক্তার জানান, ওর পুরো নাম হাসিবুল হাছান দীপ্ত। এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা ইসমাইল হোসেন একজন ব্যবাসয়ী। তারা পাগলা শাহী বাজার এলাকার বাসিন্দা। ছোটকাল থেকেই দীপ্ত চোখে কম দেখত। গত কোরবানির ঈদের আগে হঠাৎ ওর মাথা ব্যাথা থেকে ব্রেন স্ট্রোক করে। পরে পুরো চোখে দেখা বন্ধ হয়ে যায়। এখন ভারতের চেন্নাইতে ওর চিকিৎসা চলছে। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন ওর মেন্টালি সাপোর্ট প্রয়োজন। আজ এমপি শামীম ওসমান ওর জন্য কেঁদেছেন। ওকে বোনের ছেলে মর্যাদা দিয়ে গেছেন। দীপ্ত অনেক খুশি।
বিডি প্রতিদিন/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন