প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়া সেই সাব-রেজিস্ট্রার সাময়িক বরখাস্ত!
25 Mar, 2018
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সেই সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বোরবার দুপুরে ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান তাকে বরখাস্ত করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার (ডিআর) সাবিকুন্নাহার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রোববার সকালেই সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলকে আড়াইহাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে রূপগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকশিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ওইদিন দুপুরে ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান আড়াইহাজারে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন এবং দলিল লেখকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করে ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তাকে বরখাস্ত করেন।
এদিকে, দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ভূইয়া জানান, একজন স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার পোস্টিং দেয়ার জন্য আইজিআরের কাছে দাবি করা হয়। তিনি তাদের দাবি দ্রুত পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপর দলিল লেখকদের কলম বিরতি স্থগিত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি অফিসে বসে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভিডিওতে দেখা যায়, টেবিলের ওপর কম্পিউটার। রয়েছে মুঠোফোন ও ফাইলের স্তূপ। প্রতিটি ফাইলে স্বাক্ষর করার আগে টাকা গুণে ড্রয়ারে রাখেন তিনি। পাশ থেকে একজন ফাইল এগিয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন টাকা কম দেয়ায় টাকা ছুড়ে দিচ্ছেন। পরে আবার তার চাহিদা মতো টাকা ড্রয়ারে রাখছেন। ড্রয়ারে টাকার অনেকগুলো নোট জমার পর নিজ হাতে তিনি প্যান্টের পকেটে তা গুঁজে রাখছেন। সরকারি কক্ষে বসে এভাবেই ঘুষের কারবার চালাচ্ছিলেন আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডল।
দলিল লেখক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ব্যাংক মরগেজ চুক্তিনামায় আগে কোনো টাকা লাগতো না। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক মণ্ডল চুক্তিনামা স্বাক্ষর করতে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। পাওয়ার ও পারিবারিক বণ্টন দলিলে চালান বাদে সরকারকে কোনো ফি দিতে হতো না। কিন্তু এই সাব-রেজিস্ট্রার এসব দলিল থেকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। আগে হেবা দলিলে সরকারি ৬৪০ টাকা দিলে সাব-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করতেন। এছহাক মণ্ডল হেবা দলিলে স্বাক্ষর করাতে ২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন।। কোনো দলিল লেখক ঘুষ নিয়ে তার সাথে দরকষাকষি করলে তিনি দলিল ছুড়ে ফেলে দিয়ে নানা অশালীন বাক্য প্রয়োগ করেন। তিনি আরও জানান, সপ্তাহের দুই তিন দিন অফিস করে আড়াইহাজার থেকে নয় থেকে দশ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে গেলেও তার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তার অতিরিক্ত চাহিদার কারণে জমি বেচাকেনা কমে গেছে। সাধারণ দলিল লিখকরা দলিল করাতে না পেয়ে অন্য পেশায় যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন