সংবিধানে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই একটি নির্বাচনকালীন সরকার হবে। যারা নির্বাচনকালে রুটিন ওয়ার্ক করবেন। জাতীয় সংসদে শুধু আমাদের (জাপা) প্রতিনিধি নয়, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রয়েছে। সেসব দলের প্রতিনিধি যাতে নির্বাচনকালীন সরকারে থাকে সে বিষয়টা গতকালের (২৪ মার্চ) সমাবেশে আমাদের (জাপা) দলের চেয়ারম্যান বলেছেন।
শনিবার রাতে সময় টেলিভিশনে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ শীর্ষক টক শোতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এসব কথা বলেন।
তার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও টক শোতে উপস্থিত ছিলেন।
বিগত নির্বাচনগুলোতে তো জাতীয় পার্টি সব আসনে প্রার্থী দেয়নি, এবার কি সম্ভব হবে- সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেই সময় ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। কোন পরিস্থিতিতে গত নির্বাচন হয়েছে তা দেশবাসী জানে, কিন্তু এবারতো সেই পরিস্থিতি নাই। জাতীয় পার্টি এ দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব মানেই তো সব জায়গায় বিজয়ী হবো, তা না। তবে সব আসনে জাতীয় পার্টির ভোট আছে।’
জনসভায় আপনারা বলেছেন জাতীয় পার্টি কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না, এটা কেন বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘অনেকই মনে করে জাতীয় পার্টি অন্যদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি, কিন্তু তা আমরা মনে করি না। মানুষ মনে করে জাতীয় পার্টি যেদিকে যাবে তারাই সরকার গঠন করবে। তাই এবার আমরা সব আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবো।’
১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কাছাকাছিসংখ্যক আসন পেয়েছিল। ওই সময় জাতীয় পার্টি যাকেই সমর্থন দিতো সে দলই সরকার গঠন করবে এমন পরিস্থিতি ছিল। অনেক অফার সত্ত্বেও আমরা সে সময় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা মনে করি আগামী নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল থাকবে। সেখানে আমরা যদি এমন কিছুসংখ্যক আসনে বিজয়ী হই সেখানে অন্যরা মনে করবে, এদল বসলে আমাদের ক্ষতি হবে, অন্যদলও এটা মনে করবে। তাই অন্যরা মনে করবে আমরা বসলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। তাই সবাই আমাদের সমর্থন দেবে এবং সরকার গঠন করবো।’
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তাই দিনটিকে ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘এই ঘৃণিত দিনে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তারা (জাপা) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করল। সে সময় আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। আমিও সেই সময় ছাত্রলীগ করতাম। এ আন্দোলনে যারা মারা গিয়েছিল তারা ৯৫ শতাংশ ছিল আওয়ামী লীগের। সে দলটি (আওয়ামী লীগ) কীভাবে এমন একটি দিনে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে তাদের সমাবেশ করতে দিলো? অথচ আরেকটি দল (বিএনপি) যারা সে সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছিল, সে দলের নেত্রীকে কারাগারে রাখা হয়েছে।’
খালেদা জিয়া কোনো অপরাধ করেননি দাবি করে হাবিব বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তত কিন্তু খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। তিনি কোন অপরাধ করেছেন যাতে করে তাকে ছাড়া নির্বাচন করতে হয়?’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে একই ধরনের অপরাধ প্রতিনিয়ত করছে ক্ষমতাসীন দল এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, ‘জার্মান গবেষণা সংস্থা যখন বাংলাদেশকে স্বৈরাচার বলছে, তখন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করছে। অথচ কোনো সংস্থা যদি একটি সূচক প্রকাশ করে, তা তুলে ধরে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশ পুরো অন্ধকার করে ফেলে আওয়ামী লীগ। এটাতো তাদের দ্বিমুখী আচরণ।’
স্থানীয় সরকার কিংবা পেশাজীবী নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে পড়ে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বলেন, ‘যদিও বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন। এটা একটা ভিত্তিহীন মন্তব্য। কারণ আইনজীবীরাতো দেশের জনপ্রতিনিধি নন, জনপ্রতিনিধি হলো মানুষের ভোটে নির্বাচিতরা।’
আওয়ামী লীগ ১৯৯৫ সালে বিএনপির অধীনে নির্বাচনে যাবে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, এখন বিএনপি একই দাবিতে আন্দোলন করছে। সংবিধানতো চাইলেই পরিবর্তন করা যায় দর্শকের এমন প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের অধীনস্তদের একটা প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর নোটের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি জারি করেননি। এ নির্বাচন কমিশনের আলাদা সচিবালয় রয়েছে, জনবল ও বাজেট রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ১৯৯৬ সালের প্রেক্ষাপট কিন্তু এক নয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন শুধু আমরা বর্জন করিনি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি সংবিধান পরিবর্তনের জনদাবি ছিল। এজন্য বিএনপি তখন সংবিধান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছিল।’
নওফেল বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের দাবির সমর্থনে আজ পর্যন্ত কোনো জনমত দেখাতে পারেনি। যেহেতু তারা জনমত দেখাতে পারেনি, তাই আমরা কেন সংবিধান সংশোধন করবো? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে এসে বিজয়ী হয়ে তারা সংবিধান সংশোধন করুক। বর্তমান সংবিধানিক কাঠামোতে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার সুযোগ রয়েছে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার উল্লেখ আছে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে বাধ্য।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন