১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের দেশের মানুষের ওপর গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাটে সহযোগিতা করায় জামায়াতে ইসলামীর কঠোর সমালোচনা করেছে ধর্মভিত্তিক আরেক দল ইসলামী আন্দোলন।
দলের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ৪৭ বছর আগের এই ভূমিকার জন্য জামায়াত কখনও বাংলাদেশে বিজয়ী হতে পারবে না।
‘জামায়াত ইসলামীর মাধ্যমে আল্লার জমিনে আল্লার দিন প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে এর কারণও ব্যাখ্যা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির। তার মতে, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বিজয়ী হতে পারে না।
রবিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের খারদ্বার মাদ্রাসায় ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে ওলামা সমাবেশে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে, তখন জামায়াত পক্ষ নেয় দলখদার বাহিনীর। নিজ দেশের মানুষ আক্রান্ত, কিন্তু সেনাবাহিনীর দালালিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জামায়াত।
এপ্রিলের শুরুর দিকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম ধর্মভিত্তিক বেশ কিছু দলের নেতাদেরকে নিয়ে দেখা করেন সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে। তুলে ধরেন বাঙালি নিধনের নানা পরামর্শ।
এরপর জামায়াতের নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীরা গঠন করে আলবদর বাহিনী।
নয় মাস জুড়ে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আগে দেশ থেকে ভেগে যান গোলাম আযম। ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ দোসররাও গা ঢাকা দেন।
পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সুযোগ বুঝে এরা আবার আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন গোলাম আযম।
জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সেনা শাসনের সময় সুযোগ বুঝে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৯০ সালের পর দেশ গণতন্ত্রে ফেরার পর থেকে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে দলটি।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী কিন্তু বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করছিল। আমরা যারা তার সাথে জড়াইছিলাম তারা কিন্তু একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু তাদের পেছনে একটি সিল লেগে গেছে। তা হলো স্বাধীনতাবিরোধী সিল।’
‘যে দেশটা স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল সেই দেশের বিরোধিতা করেছে তারা।’
‘কোনো দেশের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি তামাম দুনিয়ার ইতিহাসে বিজয় লাভ করেছে তার কোন নজির পৃথিবীতে নেই।’
নিজ দল ইসলামী আন্দোল কে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি দাবি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেন চরমোনাইয়ের পীর। বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে তাদের পরিচয়ও করিয়ে দেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের বাগেরহাট জেলা সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওলামা সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ছরছিনার পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকি, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির আব্দুল আউয়াল, ফজলুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ, ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগরীর সভাপতি মুজ্জাম্মিল হক, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম রুহুল আমিন, যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি নেছার উদ্দিন, ইসলামী আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিয়ার রহমান, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মাহবুবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
মাঠে নামছে বীর, চরমোনাইর পীর
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন