জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী নির্বাচনকে অর্থবহ করার লক্ষ্য নিয়ে শিগগিরই রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে এগোবে দলটি।
বিএনপির দায়িত্বশীল দুজন নেতা প্রিয়.কমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ওই দুই নেতা জানান, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইতোমধ্যেই দলের সাংগঠনিক ৭৮ জেলা, থানা ও পৌরসভার ‘সুপার ফাইভ’ নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তৃণমূল নেতাদের পরবর্তী নির্দেশনা জানানোর আগেই সাংগঠনিকভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি এখনো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতা খুব বেশি দিন ধরে রাখলে খালেদা জিয়ার মুক্তি তো দূরে থাক, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও আদায় করা যাবে না। তাই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি শিগগিরই দাবি আদায়ে নতুন কৌশলের আশ্রয় নেবে দলটি। নিয়মতান্ত্রিক থেকে সরে আসে কঠোর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হবেন নেতাকর্মীরা।
সেই ‘কঠোর’ আন্দোলনের ধরন কেমন হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা কিছুই জানাননি। তবে অচিরেই দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম, দলের সাংগঠনিক দায়িত্বশীল নেতা ও ২০ দলীয় জোট পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠক করে এই আন্দোলন পরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রিয়.কমকে বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীনরা যেভাবে বিএনপির প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ‘গান্ধীবাদী অসহিংস’ আন্দোলন করে কার্যকর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো যাবে না। ফলে বিএনপিও হয়তো বসে থাকবে না, বরং বিএনপি স্বল্প সময়েই (হতে পারে এপ্রিল মাস) ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথ আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে উঠবে। দাবি আদায়ে তাদেরকে (সরকার) বাধ্য করা হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো দাবি নেই যা বিনা আন্দোলন, বিনা রক্তপাতে আদায় হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাস্তব উদাহরণ। বিএনপি মনে করছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করা নয়, বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব। মূল কথা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতেই সরকার উঠেপড়ে লেগেছে।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। যদিও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ (সরকার) বিএনপিকে নিয়ে যে নির্বাচন করবে না, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞায় আমার বিশ্বাস ও ধারণা আগামী একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে, বরং বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না চায়, সেই ষড়যন্ত্র অব্যাবত রাখবে।’
২০ মার্চ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা জাতীয়তাবাদী যুব ফোরাম আয়োজিত ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু’র নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক প্রতিবাদ সভা হয়। এতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও।
সভায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়ে মওদুদ বলেন, ‘যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট দেশের উচ্চতর আদালত, আমরা পছন্দ করি আর না করি, তাদের রায় আমাদের মেনে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তার সাথে সাথে সময় আসছে কতদিন আর আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব? একটা পর্যায় আসবে, দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আর চাইবে না। তখন বাধ্য হয়ে আমাদেরকে তাদের সাথে থাকতে হবে। তাই এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আবারও ফিরে আসবে।’
দলটির দফতর সূত্রে জানা যায়, ৩৮টি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন একটি প্রজ্ঞাপন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দলের সাংগঠনিক নেতাদের পাঠানো চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রজ্ঞাপন সংগ্রহ করে অর্ন্তভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে ২৪ মার্চের মধ্যে মহাসচিব বরাবর পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আবদুস সালাম আজাদ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের দিকে তৃণমূলকে গতিশীল করতে চলতি ২২ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন