কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘নিজের আইনজীবীদের প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই বলে খালেদা জিয়া আজ একজন বিদেশি আইনজীবীকে নিয়োগ করেছেন। সেই আইনজীবী কে? সেই আইনজীবী হলেন একাত্তরের ঘাতক মীর কাশেম আলীর আইনজীবী। তার মানে হলো, এখনো খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়ে নাই, একাত্তরের ঘাতকদের ছড়ে নাই।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ করে নাসিম বলেছেন, ‘আপনার নেত্রী জেলে আছেন। আপনাদের আন্দোলন হলো ঘরের মধ্যে। আর আমরা জেল খেটেছি, মার খেয়েছি, মাঠ ছাড়ি নাই। আপনার দলের লোকেরা এমন লোক, মারের আগেই পালিয়ে যায়।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৪ দলের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। সমাবেশটি কেন্দ্রীয় ১৪-দলীয় জোটের হলেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই মূলত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
বেলা তিনটার দিকে সমাবেশ শুরুর সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ জনাকীর্ণ ছিল। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ইউনিট মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। পরে বিকেল চারটার দিকে লোকসংখ্যা কমতে থাকে। সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের কর্মীদের খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে সব দলেরই কম-বেশি ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আদালত খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু আজকে শুনলাম উনার নিজের আইনজীবীর ওপর কোনো বিশ্বাস নাই।’
আগামী নির্বাচন বিষয়ে নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলার জনগণ খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য বর্জন করবে। সামনে নির্বাচন আসছে, এই নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তিনি আরও বলেন, যেকোনো বাধা, হুমকি দেওয়া হোক না কেন, কোনো কাজে আসবে না। বাংলার জনগণের নেত্রী দেশের সব সমস্যা সমাধান করেছেন। সেই নেত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলার জনগণ আবার নির্বাচিত করবে।
বিএনপির উদ্দেশে নাসিম বলেন, ‘যদি সাহস থাকে মাঠে খেলতে আসেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে চাই না। মাঠে খেলেই নির্বাচনের গোল দিতে চাই।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশে বারবার জঙ্গি আক্রমণ হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, যত বাধাই আসুক, বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবেই। যারা দেশের অর্জন, উন্নয়ন চায় না, তারা বারবার ষড়যন্ত্র করবে। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইবে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জঙ্গিরা বিভিন্নভাবে মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্ত করে। আজকে একটাই কথা, মানবতাবিরোধীরা কখনোই ইসলামের লোক না।
বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৩ সালে দেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের সময় খালেদা জিয়া দানবের মতো আচরণ করেছিলেন। আর শেখ হাসিনা ২০১৭-এ মানবতার মাতা হয়েছেন। কাজেই মানবতা আর দানবতা একসঙ্গে চলতে পারে না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেকেই বলে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা সে (জঙ্গি) নিজে নিজে করেছে। এটা ভুল। এটা পরিকল্পিত ঘটনা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাসদের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, গণ আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, সাম্যবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, নাগরিক কমিটির সদস্য ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন