টানা দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে বিরোধী দলের সহিংস আন্দোলন করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। জঙ্গিবাদের থাবা বিস্তারের চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে ঠেলে দেয়া হয়েছে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও হাসিখুশি মেজাজেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এই হাসিখুশির কারণ কী? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভয়ে মুখ শুকিয়ে থাকি না আমি। ১৯ বার আক্রান্ত হয়েছি। সময় যখন আসবে মরতে হবেই।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারি বাসভবন গণভবনে ভারতের এক দল সাংবাদিককে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর হেসে আবৃত্তি করেন- ‘জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!’
ভারতীয় সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের ডাকিনি। প্রধানমন্ত্রী আজ আছি, কাল নাও থাকতে পারি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে ভারতের মানুষকে আমি প্রাণের বন্ধু বলে মনে করি।’ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সাংবাদিকদের অবদানও স্মরণ করেন তিনি।
বাংলাদেশি একটি থিংক ট্যাংকের আমন্ত্রণে এসব সাংবাদিক ঢাকায় আসেন। তাদের কাছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে নিজের আশাবাদের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যখন প্রশ্ন তুললাম- তিস্তার পানির কী হল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন- বিদ্যুৎ নিন। বললাম, আচ্ছা তাই দিন, যা পাওয়া যায় আরকি!’
বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করা আত্রেয়ী ও চূর্ণি নদীর পানি নিয়ে ওঠা অভিযোগ নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসবই তিস্তার পানি না দেয়ার অজুহাত!’ তবে তিস্তা নিয়ে আশা ছাড়ছেন না বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার কথায়, ‘আবার এটিও ঠিক, উনি (মমতা) বলেননি- দেবেন না। আমরা আশা করছি দেবেন।’ আর এ আশাতেই তিস্তার শাখা নদীগুলোতে ড্রেজিং করছে ঢাকা। যাতে পানি এলে দেরি না করে তা ব্যবহার করা যায়।
তবে ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তিই দুই দেশের সম্পর্কের শেষ কথা নয়। তিস্তা নিয়ে জটিলতা একটি বাস্তবতা। কিন্তু অন্য দিকগুলোতে সহযোগিতা সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বললেন- ‘পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার দিল্লির সঙ্গে যে সহযোগিতা করেছে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা-কলকাতা বাস, মৈত্রী আর বন্ধন ট্রেন হয়েছে। ট্রানজিট দিয়েছি। চট্টগ্রাম আর মোংলাবন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছি। কোনো বিষয়ে আমরা কার্পণ্য করিনি।’ তিনি আশ্বাস দেন- ‘বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের কাছ ভারত- ভারতের জায়গাতেই থাকবে। আর চীন- চীনের জায়গায়। ভারতের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। চীন নতুন বন্ধু।’
ভারতের ভূমিকা নিয়ে একবারই আক্ষেপ করার কারণ ঘটেছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের ভোটে আমরা ভারতের সহযোগিতা পাইনি। তারা যাদের সহযোগিতা করেছিল, তারা কিছুই দেয়নি।’
এ বছরই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি যোগ দেবে কিনা ভারতীয় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে দলের অভাব নেই। তারা না এলেও ভোট ঠিকই হবে।’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন