চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপিকে ২২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে আগামী শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। তবে ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটি পরিবর্তন করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরের পূর্ব ঘোষিত ‘কালো পতাকা মিছিল’ কর্মসূচির পরিবর্তে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ‘কালো পতাকা প্রদর্শন’ করা হবে।
বহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড.রুহুল কবির রিজভী এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি কালো পতাকা মিছিলের চেয়ে কালো পতাকা প্রদর্শনের ব্যাপকতা বেশি। এতে সাধারণ মানুষ যে কোনও যায়গায় এটি প্রদর্শন করতে পারবে। এছাড়া মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়নে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে যতো অপকৌশলই সরকার করুক না কেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং দেশের জনগণ তা মেনেও নেবে না।’
দেশনেত্রীকে নির্বাচন থেকে মাইনাস করার উদ্দেশ্যেই সরকার নীলনকশা এঁটে বেগম জিয়াকে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করেছে বলেও দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এটি এখন জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দমনমূলক হামলা-মামলায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রুদ্ধ করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে বন্দি করার পর দেশবাসী জেগে উঠেছে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে লাখো মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। সারাদেশব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। এতেই সরকারের ভীত নড়বড়ে হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রশূন্যতার কারণেই ক্ষমতার ভারসাম্য বলে কিছু নেই। একজনের ক্ষমতাই সর্বব্যাপী। আইন, বিচার, আদালত ‘সর্বত্রই শেখ হাসিনার ছায়াশাসনের আওতাভুক্ত’। আওয়ামী সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করার জন্যই একের পর এক সাজানো মামলায় একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছে। যারা বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে তাদেরকে অবলম্বন করতে হয় অনাচারের ওপর। এই অনাচারে একদিকে যেমন চলছে জবরদখল, খুনের ভয়, রক্তপাত, চাঁদা আদায়ের দাপট ও বেঘোরে জীবনহানির নিরাপত্তাহীনতার মাধ্যমে নাগরিকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করা, অন্যদিকে অনাচারের একটি কুৎসিত দিক হচ্ছে- প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে দেশকে আদিম অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল হোসেন প্রমুখ।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় গতকাল বুধবার বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা দিয়েছিলেন, বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করছে বিএনপি। তবে ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ‘কালো পতাকা প্রদর্শনে’ বাঁক নিলো।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করেছেন আদালত। এ মামলায় শুনানি জন্য আগামী রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন দুপুর ২টায় শুনানি শুরু হবে।
একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের দেয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মামলার সব নথি পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় আবেদনের উপর শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ১ হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এতে প্রাথমিকভাবে মোট ৪৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া আপিল আবেদনের ওকালতনামায় খালেদা জিয়ার পক্ষে মোট ২৮ জন আইনজীবীর স্বাক্ষর রয়েছে।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ০৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই কড়া নিরাপত্তায় খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই বন্দি আছেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন