বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যারা স্বাক্ষর দিচ্ছেন, তাদেরকে সতর্ক করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, বিএনপি সাদা কাগজে সই নিচ্ছে। এতে সহায় সম্পদ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে কি না, সেটিও ভেবে দেখতে হবে।
পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া বিএনপি নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি গণস্বাক্ষর অভিযানের ঘোষণা ছিল বিএনপির। তবে এই যতদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয়, ততদিন এই সাক্ষর চলবে বলে জানিয়েছে দলটি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিচ্ছেন। ভেবে দেখবেন কোথায় স্বাক্ষর দিচ্ছেন। আপনার মাল নিয়ে যাচ্ছে কি না তাও বিবেচনা করে দেখবেন।’
‘আমি জনগণের মন্ত্রী, তাই সবাইকে আমি এইকথাটা বলছি যে, স্বাক্ষর দিতে চাইলে দেন। কিন্তু কোথায় দিচ্ছেন কী কারণে দিচ্ছেন ভেবে দেখবেন।’’
রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতি মুক্ত রাজনীতি’ বিষয়ে এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন মন্ত্রী। লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় খালেদা জিয়ার রায়ের কপি পেতে বিলম্ব নিয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যেরও জবাব দেন আইনমন্ত্রী।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রায়ের পর পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কপি দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আনিসুল হক জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ডের রায় ছাড়া অন্য কোনো মামলায় এমন কোনো বিধান নেই।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায়ে কপি ‘যুক্তিসঙ্গত সময়ে রায়ের কপি পাওয়া যাবে’জানিয় মন্ত্রী বলেন, ‘বিচারক যখন মনে করবেন তখন দেবেন।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী। রায়ের কপি না পাওয়ায় আপিল ও জামিন আবেদন করা যাচ্ছে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বিলম্বের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপকে দায়ী করেছেন। পাঁচ কার্যদিবসে রায়ের কপি দিতে বাধ্যবাধকতার দাবিও করেছেন তিনি। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীনও রায়ের কপির বিষয়ে সময়সীমার বাধ্যবাধকতা থাকার দাবি করেন।
তবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রায়ের কপি কখন পাবেন এ নিয়েও বিধিমালা আছে। শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে সাথে সাথে বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রায়ের কপি দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রায়টা কত বড়, তার ধরন কী তার বিবেচনার বিষয় থাকে।’
‘এই রায় ৬৩২ পৃষ্ঠার। সুতরাং বিজ্ঞ বিচারক যখন মনে করবেন তখন দিয়ে দেবেন।’
রায়ের কপি পেতে বিলম্বে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই এই মামলায় সরকারের কোন হাত নেই। এই রায়ের বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত কথা না বলে বিএনপি নেতারা জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিতে চাইছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা করার তা করছে, করবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক, লেখক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন