মহাখালী রেলগেট থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার যেখানে হেলে পড়া শুরু করেছে তার বাম পাশে আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। হাসপাতালের পেছনে প্রতিরক্ষা ক্রয় ভবন। প্রতিরক্ষা ভবনের দিকে বেশিদুর এগুতে হবে না। একটু যেতেই ফুটপাতের দেয়াল জুড়ে চোখে পড়বে কিছু অদ্ভুত পোস্টার। যেসব পোস্টারে দেখা যাচ্ছে- আগুন জ্বলছে, তার পাশে এক ব্যক্তির আহাজারি। আরেক পোস্টারে- হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধানো ঘুমন্ত সন্তানের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন এক মা। অপর পোস্টারে-এক বৃদ্ধ মা তার আগুনে পুঁড়ে যাওয়া সন্তানের মাথার পেছনে কাঁদছেন। এসব পোস্টারের নিচে লেখা হয়েছে- খালেদা জিয়াকে ভোট দেবেন না।
প্রশ্ন হলো- কে বা কারা সাঁটালো এসব পোস্টার। আর কেনই বা ভোটের আগে এমন প্রতিহিংসার ছড়ানোর রাজনীতি শুরু হলো। পোস্টারগুলো কি রাতের আঁধারে নাকি দিনের বেলা সাঁটানো হয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে ফুটপাত ধরে হাঁটতে ও চলতে গিয়ে যাদের চোখে এই পোস্টারগুলো পড়ছে তারাই একটু থামছেন। এক পলক চোখ বুলিয়ে আবারও হাঁটা শুরু করছেন।
রাস্তার দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার। ছবি: প্রিয়.কম
শুধু মহাখালী এলাকায় নয়, এমন পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে রাজধানীর বাসাবো, খিলগাঁও, বনানী, উত্তরা, মতিঝিল, পল্টন, যাত্রাবাড়ি, পল্লবী, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকা। যেসব এলাকায় লোক সমাগম বেশি, সহজেই মানুষের চোখে পড়বে সেখানেই সাঁটানো হয়েছে এসব পোস্টার। আরও সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের পিলার, ফুটপাতের দেয়াল, ফ্লাইওভারের দেয়াল জুড়ে।
কয়েকদিন ধরে পোস্টারগুলো চোখে পড়লেও আজ (রোববার) তেমন চোখে পড়েনি। অনেক পোস্টারই তুলে ফেলা হয়েছে। যার নমুনাও পাওয়া গেল প্রতিরক্ষা ভবনের সামনের ফুটপাতে। দেখা গেল, দেয়ালে একই সাথে তিনটি পোস্টার আটকে থাকলেও মাটিতে আরও চারটি পড়ে আছে।
কেউ কেউ বলছেন, এসব পোস্টার হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ভোট বিরোধী প্রচারণা।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। বিএনপি দাবি করছে-এই পোস্টার প্রচারণা আওয়ামী লীগের কাজ। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ দাবি করছে এর সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
‘খালেদা জিয়াকে ভোট দিবেন না’ রাজধানীর দেয়ালে লাগানো এমন পোস্টার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রিয়.কমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ভোট দিবেন না বলে প্রকাশিত পোস্টার লাগানো আওয়ামী লীগের অপপ্রচার। তাদের কাজই হচ্ছে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অপপ্রচার চালানো।’
‘যা অপপ্রচার ও গোপনীয় মিথ্যা কর্মকাণ্ড তার প্রকাশিত পোস্টারের ক্ষেত্রে প্রচারণায় নাম থাকে না। রাজনৈতিক জীবনে এই ধরনের কত কিছুই তো দেখলাম।’
রাস্তার দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার। ছবি: প্রিয়.কম
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আসলেই তো প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে এসব কথা বলেন। কিন্তু যারা পোস্টার ছাঁপিয়েছেন তারা নাম দেয় নাই আর স্বাভাবিক কারণে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না এই কাজগুলো বিএনপি করেছে। যদি আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করত যে বিএনপি মানুষ পুঁড়িয়ে জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাহলে তারা (আওয়ামী লীগ) স্বনামে পোস্টার ছাপাত।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে বিএনপি জ্বালাও-পোড়ায়ের রাজনীতি করে না। শুধু তারাই নয় এটা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জানে। তাছাড়া দেশে তো কোনো নির্বাচন নাই। আমরা বলে যাচ্ছি নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দিতে অথচ সরকার সেই পথে হাঁটছে না। যদি সেই পথে যেত তাহলে বুঝতে পারত কে মানুষ পুঁড়িয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এমনকি যদি সত্যি হতো তাহলে আওয়ামী লীগ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিত। সেটা তো তারা বিশ্বাস করে না। সে কারণেই এটা প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে নানান অপপ্রচারণা চালাচ্ছে।’
অপরদিকে বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সাঁটানো পোস্টারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিএনপি এ ধরনের নাশকতা করে এটা মিথ্যা নয়। তবে আওয়ামী লীগ যদি এই পোস্টার লাগিয়ে থাকত তাহলে নিশ্চয়ই পোস্টারে দলের নাম থাকত। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গোপন রাজনৈতিক দল নয়।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন