যশোর সদর উপজেলার রঘুরামপুরে 'বন্ধুকযুদ্ধে' নিহতের ঘটনায়ও যশোরে আসামি করা হলো বিএনপি-জামায়াত, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা যুবদল ও ছাত্রদলও জেলা ও শহর জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নাম রয়েছে। পুলিশের দায়ের করা এ মামলাকে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনকে টার্গেট করে যশোর পুলিশ নোংরামি শুরু করেছে।
পুলিশের ভাষ্য, সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে দুইদল সন্ত্রাসীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হন। এই ঘটনায় কোতয়ালী থানার এসআই নুর উন নবী ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ৭-৮ জনকে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা বিরোধী জোটের নেতাকর্মী। যদিও এজাহারে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
আসামিরা হলেন, মিশনপাড়ার ডিসি বাংলো যশোরে সাবেক এমপি মৃত আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু (নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক), শংকরপুর চোপদারপাড়ার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে বদিউজ্জামান ধনি (নগর যুবদল সাধারণ সম্পাদক), চাঁচড়া ডালমিল এলাকার মৃত আইনুল হকের ছেলে আনসারুল হক রানা জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক), উপশহর বি ব্লক এলাকার শান্তি জোয়ার্দারের ছেলে সুমন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি) বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে ফারুক হোসেন (নগর ছাত্রদল সভাপতি), বারান্দীপাড়া কবরস্থান এলাকার মশিয়ার রহমানের ছেলে মোস্তফা আমির ফয়সাল (জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক), চাঁচড়া মধ্যপাড়ার করিম মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল মেম্বার, চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার জেলা বিএনপি নেতা ইকু চৌধুরীর দুই ছেলে সোহেল চৌধুরী ও সুমন চৌধুরী, শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে জাকির হোসেন, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের বিএনপি নেতা রফিকুর রহমান তোতন মিয়ার ছেলে মিল্টন, নওয়াব আলীর ছেলে সোহাগ, আব্দুল জব্বারের ছেলে মুন্না, উপশহর এস ব্লকের আবু তালেবের ছেলে কবির হোসেন, শহরতলীর ঝুমঝুমপুর এলাকার মৃত ইমান আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, সিদ্দিক আহমেদেও ছেলে গোলাম রসুল, বকচর এলাকার মৃত কাদের আলীর ছেলে নুরুন্নবী, বারান্দী মোল্লাপাড়ার আব্দুস সামাদ খানের ছেলে বিল্লাল হোসাইন, সদর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত বারিক মোল্লার ছেলে কুদ্দুস এবং ভাতুড়িয়া দণিপাড়ার মৃত আহমদ আলীর ছেলে হায়দার আলী। জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম রসূল, মাষ্টার নরু-উন-নবী, বিলাল হোসেন, অধ্যাপক আলীসহ কয়েক জন। আসামিরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ শনিবার দিনগত রাত তিনটার দিকে সংবাদ পায় যে, যশোর-ছুটিপুর রোডে রঘুরামপুর গ্রামে দুইদল সন্ত্রাসীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। সংবাদ পেয়ে রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ ওই গ্রামে যায়। পুলিশ দেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে গ্রামের ইমানত মোল্লার বাড়ির প্রাচীরের পাশে এক ব্যক্তির (৩৫) লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার কপালের বাম পাশে এবং মাথার ডানপাশে ক্ষত ছিল। ধারণা করা হয়, গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। আশপাশে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় একটি ওয়ানশুটারগান, এক রাউন্ড গুলি, পাঁচটি গুলির খোসা, পাঁচটি হাসুয়া এবং সাতটি বিভিন্ন সাইজের স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়। আসামিরা বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য। তারা সেখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে অপরকে আক্রমণ করে এবং গোলাগুলি করে।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, পলাতক সন্ত্রাসী ফারুক হোসেন এবং সুমন নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিন্তার নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই দুই গ্রুপের বাকি সদস্যের নাম-পরিচয় পরে পুলিশ জানতে পারে।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা এ মামলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে যশোর জেলা বিএনপিওজামায়াতে নেতৃবৃন্দ।। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আমাদের নেতাকর্মীকে বিগত ৯ বছর ধরে শাসক দলের কল্পিত বিভিন্ন মামলায় জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধের মতো ঘটনায় আমাদেও নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানি করবে তা কখনও কল্পনা করতে পারেনি। তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে সামনে নির্বাচনকে টার্গেট করে নতুন করে নোংরামি শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় যশোর পুলিশ একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে। বিএনপি নেতা সাবু এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন