আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু, পুরো কমিটির তালিকা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। কমিটির সদস্য হওয়াদের তালিকা সমেত ছবি দিয়ে অভিনন্দনও জানাতে দেখা গেছে। কেন এই লুকোচুরি? অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অসঙ্গতি থাকায় সমালোচনা এড়াতে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট সম্পাদক, সহ-সম্পাদক ও সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অসঙ্গতি যেন মিডিয়ায় না আসে সেজন্য পুরো তালিকা একযোগে প্রকাশ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার এই উপ-কমিটির তালিকা খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ১৯টি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে অন্তত ৯৫ জন সহ-সম্পাদক ও প্রায় এক হাজার সদস্য নিয়ে উপ-কমিটি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত ওই কমিটিগুলোর তালিকা নানাজনের কাছে নানা অংশ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো একসঙ্গে প্রকাশ হয়নি বা পূর্ণাঙ্গ তালিকাও পাওয়া যাচ্ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, প্রকাশিত এসব কমিটিতে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক, অফিসের পিয়ন, ছিনতাই মামলার আসামি স্থান পেয়েছে। আগে কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে না থাকলেও গত কয়েক মাস নেতাদের পেছনে ঘুরে সরাসরি পদ পেয়েছেন অনেকে। বাদ পড়েছেন ১/১১’সহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামের পরীক্ষিত নেতারা।
এমনকি গতবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ৬৩ জন সহ-সম্পাদকের মধ্যে ১২-১৩ জন ছাড়া সবাই বাদ পড়েছেন।
জানা গেছে, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের অধীনে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে এইচ এম মিজানুর রহমান জনিকে। তিনি ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের সিরাজ গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জনির বাবা আবদুল হক বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
এছাড়া জিয়া নামে আরেকজনকে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে, তিনিও ঢাকা কলেজে ছাত্রদল করতেন।
দফতর উপ-কমিটিতে কে এম কবির হোসেন ও তানভীর হোসেন রুবেল নামের দু’জন সহ-সম্পাদকও ঢাকা কলেজে ছাত্রদল করতেন। রুবেল সে সময় জিপসি রুবেল নামে পরিচিত ছিলেন। আর কবির ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহিদের ক্যাডার ছিলেন।
সংস্কৃতির উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক এসডি রুবেল ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন এবং বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসেরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘যারা দলের বিভিন্ন শাখায় আছে বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে আছে, তাদের এখানে পদ দেওয়া হবে না।’
কিন্তু, উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ফাহিম হোসেন রনি, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক জয়দেব নন্দী যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। সহ-সম্পাদক ইসহাত আলী খান পান্না পিরোজপুর জেলা কমিটির সদস্য। সহ-সম্পাদক মশিউর রহমান শিহাব বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলি পরিবর্তন ডটকমের কাছে তার কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির তালিকা প্রকাশের কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘৪ সহ-সম্পাদকসহ ৬৬ সদস্যের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটি করা হয়েছে। এটি প্রকাশও করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে কিছুটা কারেকশন হবে।’
তবে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন তার উপ-কমিটি বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমার সম্পাদকীয় কোনো উপ-কমিটি আমি প্রকাশ করিনি। আমার সঙ্গে কথা বলেও এটি ফাইনাল করা হয়নি। দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত একটি কমিটি দেখেছি। সেটিই ফাইনাল কিনা জানি না। গতকাল (১৭ জানুয়ারি) এ নিয়ে পার্টি অফিসে কথা বলতে গেছি। কিন্তু, দলের সাধারণ সম্পাদক ও দফতর সম্পাদক সংসদে ছিলেন, তাদের পাইনি। শিগগিরই এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘কোনো উপ-কমিটি চূড়ান্ত হয়নি, যা প্রকাশ হয়েছে তা খসড়া তালিকা।’
তবে তার স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাস্ট অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে ইনিশিয়াল দেওয়া হয়েছে, অনুমোদন নয়। এটি খসড়া করে সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের দেওয়া হয়েছে। তারা দেখে ঠিক করে জমা দেবেন। এরপর দলের সভাপতি ও সধারণ সম্পাদক দেখে অনুমোদন করবেন।’
আওয়ামী লীগ নেতারা স্বীকার না করলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থ ও পরিকল্পনা, কৃষি ও সমবায়, দফতর, বন ও পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, মহিলা, শ্রম ও জনশক্তি, শিল্প ও বাণিজ্য, সংস্কৃতি বিষয়কসহ বিভিন্ন উপ-কমিটির তালিকা পরিবর্তন ডটকমের হাতে এসেছে। এখন দেখার লুকোচুরি কমিটিই চূড়ান্ত থাকে কি না?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন