চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখানে প্রকাশ্যে স্কুলছাত্র আদনান ইসফারকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যার নেপথ্যে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি হত্যার সঙ্গে জড়িত গ্রেফতার পাঁচ কিশোরও ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর ওই ৫ জন স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বাসায় অবস্থান নিয়েছিল। এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও এক ছাত্রলীগ নেতার বলে স্বীকার করেছে হত্যাকারীরা।
বুধবার রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ কিশোরকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানায়।
গ্রেফতারকৃত ৫ জন স্থানীয় চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রউফ’র অনুসারী বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের পর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৪ জন ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো.ফয়সালের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল। ওই বাড়ি থেকেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। অপর একজনকে নগরীর বাদুরতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সপ্তাহখানেক আগে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা নিয়ে খুন হওয়া আদনান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে জামালখানের আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার দিন ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রকে জামালখান মোড়ে দেখে ধাওয়া দেন আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু। আইডিয়াল স্কুলের ওই দুই ছাত্রও রউফ গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এসময় মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির এবং আরও তিনজন ‘রাজনৈতিক বড় ভাই’ জামালখানে ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যূন’ নামে একটি হোটেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ধাওয়া খেয়ে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্র তখন দৌঁড়ে ওই হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আড্ডারত বড় ভাইদের সাহায্য চায় তারা।
মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির হোটেল থেকে বেরিয়ে আদনানদের পাল্টা ধাওয়া দিলে আদনানকে ফেলে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। তখন সাব্বির এসে আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আরমান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।
আদনান দৌঁড়ে পালানোর সময় জামালখানে খাজা আজমির ওয়ার্কশপের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যান। উঠে আবারও দৌঁড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। এরপর অপর ৪ জন পেছন দিকে গণি বেকারির দিকে আদনানকে নিয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আদনানের মৃত্যুর খবর পায়। এরপর তারা সঙ্গে সঙ্গেই বাদুরতলা এলাকায় চলে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফটিকছড়ির সমিতিরহাটে সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সালের বাড়িতে অবস্থান নেয় হত্যাকারীরা।
সূত্রমতে, নগরীর চন্দনপুরা পশ্চিম গলির বাসিন্দা আব্দুর রউফ গত এক বছরে চট্টগ্রাম কলেজ-মহসিন কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি বলয় গড়ে তুলেছেন। মহসিন কলেজের ছোট গেইটের পাশে আগে শিবিরের যেসব মেস ছিল, সেগুলো পুলিশ একসময় তল্লাশি চালিয়ে খালি করে। একটি মেসের দুটি কক্ষ দখলে নিয়ে রউফ কয়েকজন কর্মীকে সেখানে রাখেন। আর রউফের গ্রুপের কর্মীরা সবসময় আড্ডা দেন ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যূন’ হোটেলে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে রউফের সম্পৃক্ততা আমরা এখনও পাইনি। তবে সম্পৃক্ততার তথ্য পেলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে। বড় ভাই, ছোট ভাই যাদের বিষয়েই তথ্য পাবো, আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে খুনের ঘটনায় আদনানের বাবা আকতারুল আজম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত আদনান কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন