একদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। দুই হেভিওয়েট ভিআইপি প্রার্থীর নির্বাচনী আসন নোয়াখালী-৫। কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের অধিবাসীরা এ দুই নেতাকে নিয়ে গর্ব করেন। এই দুই নেতার যে যখন ক্ষমতায় গিয়েছেন এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বর্তমানে এলাকাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে যাচ্ছেন।
একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির এ দুই নেতাই এখন আলোচনায়। আগামী নির্বাচনে তারা ফের মুখোমুখি হচ্ছেন ভোটের লড়াইয়ে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মেট্রো হোমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলহাজ ফখরুল ইসলাম। এদিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘন ঘন এলাকায় এলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি এলাকায় এসে গেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি উপলক্ষে বেশ কয়েকটি সভা করেন। এসব অনুষ্ঠানে তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এর মধ্যে বসুরহাটকে পৌরসভায় উন্নত করা, সরকারি মুজিব কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজ, বসুরহাট হাই স্কুল, মাকসুদাহ্ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। এছাড়াও কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কথা জানান তিনি। মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর নির্মাণ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিস স্থাপন, নোয়াখালী জেলা জজকোর্ট ভবন, কবিরহাটকে উপজেলা এবং কবিরহাট থানা, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন তার হাত ধরেই হয়েছে বলে বিভিন্ন সভায় উল্লেখ করেন। এছাড়াও তার সময়ে ব্যাপক গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করার বিষয়ে নেতাকর্মীদের অবহিত করেন। তিনি সরকারের নানা অনিয়ম ব্যর্থতা, ভোটের অধিকার আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ জনগণের কাছে গিয়ে ধানের শীষে ভোট চাওয়ার আহ্বান জানান। ১৯৭৭-১৯৭৯ সালে ব্যারিস্টার মওদুদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। এরশাদ সরকার তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আবার এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি তখন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হয়ে সরকারের যুব ও ক্রীড়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ১ হাজার ৩৭২ ভোটে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের রয়েছে এলাকায় শক্ত অবস্থান। সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ার সুবাধে সারা দেশের ন্যায় নোয়াখালী-৫ আসনে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ কর্মীবৈঠক, নারী সমাবেশসহ বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, কবিরহাট পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক রায়হান। ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রতিদিন নারী সমাবেশ, কর্মী সমাবেশের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন। এ ছাড়াও সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এলাকায় দফায় দফায় যাতায়াত করছেন। উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে শক্ত অবস্থানে রাখার জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল ও সেতুমন্ত্রীর ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের উপকূলীয় এলাকায় নদী ভাঙন রোধে ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর ক্লোজার প্রকল্প বাস্তবায়ন, ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী জেলার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাপুর কোম্পানীগঞ্জ সোনাগাজী জোরালগঞ্জ সড়ক সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন, বসুরহাট মুজিব কলেজে অনার্স কোর্স চালু ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ সব ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এলাকাবাসী ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মাঠে-ময়দানে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেলেও বিএনপি রয়েছে অন্তর্কোন্দলের মধ্যে। নির্বাচনী মাঠে কর্মিসভা, সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ তেমন চোখে পড়ে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্তর্কোন্দলের কারণে সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা হতাশ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বারবার চেষ্টা করেও নেতাকর্মীদের এসব কোন্দলের কোনো সমাধান করতে পারেননি। আগামী নির্বাচনে এ কোন্দল বিএনপির জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে বলে নেতাকর্মীদের অভিমত। ওদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন ঢাকা মেট্রো হোম্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলহাজ ফখরুল ইসলাম ফারুক। এ আসনে তার অবদানও কম নয়। তিনি বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণবিতরণ, প্রতি ঈদে ও শীত মৌসুমে সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে কাপড়, নগদ টাকা, কম্বল বিতরণ করেন। যার কারণে সাধারণ ভোটাররা তাকে নির্বাচনী মাঠে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করেন। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রো হোম্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলহাজ ফখরুল ইসলাম ফারুক মানবজমিনকে জানান, আমি বিগত উপজেলা নির্বাচনে ৪ দলীয় জোট থেকে অংশ নিয়েছি। ভোট জালিয়াতির কারণে আমি সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রত্যাহার করি। এরপরও আমি ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছি। এ আসনের সাধারণ জনগণ আমাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করতে চান। জনগণ চাইলে আমি তাদের খেদমত করতে প্রস্তুত আছি। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন আজাদের নামও শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন