মোহাম্মদ আলী বোখারী
খবরটি চাউর হয়েছে চতুর্দিকে। কারণ, বিষয়টি বিপুল অঙ্কের; তাই টাকাও বেমালুম ডলারে রূপান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ ১ টাকা আনুমানিক ৮৫ টাকায় এবং সেই হিসাবে ১২০০ কোটি টাকা সরাসরি ১২ বিলিয়ন ডলারে রূপান্তরিত হয়েছে। তাতে শূন্যের সংখ্যাধিক্য নয়, বরং ৮৫ গুণ হয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৪/৫টা পদ্মা সেতু বানানো যায়! সেই বিশাল অঙ্কের অর্থপাচারে ‘একক’ পরিবার জড়িত, এমন দুর্নীতির পুরো বৃত্তান্ত জানার অধিকার জনগণের রয়েছে বৈকি!
অনুসন্ধানে দেখা যায়, লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শেষে বিএনপিতে যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, তা ম্লান করতে দুর্নীতির দায়ে সৌদি যুবরাজদের ধরপাকড়ের সঙ্গে জিয়া পরিবার জড়িয়ে গেছে। এতে কিছু সংবাদ উৎস থেকে বলা হয়েছে যে, ‘সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার ১২০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা সৌদি ক্রাউন প্রিন্স তদন্ত করছেন’। সেটা ক্রমেই ‘সৌদিতে খালেদা জিয়ার অবৈধ টাকা’, পরে ‘দুবাইয়ে জিয়া পরিবারের হাজার কোটি টাকার সম্পদ’ এবং ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তালিকায় নাম উঠে এসেছে জিয়া পরিবারের’ এমন শিরোনামে ব্যাপৃত হতে থাকে।
এরই একপর্যায়ে ‘জিয়া পরিবারের দুবাইসহ ১২ দেশে ১২শ কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের (জিএনআই) রিপোর্ট সরকারের হাতে এসেছে এবং এ নিয়ে তদন্ত চলছে’, বক্তব্যটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলে সংবাদটি ভিন্নমাত্রা পরিগ্রহ করে। গণমাধ্যমে প্রচার শুরু হয় যে, ‘সৌদি সরকারের তদন্তে দেখা গেছে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জিয়া পরিবারের অবৈধ সম্পদ’ রয়েছে। কিন্তু সেটা চ্যালেঞ্জ করে বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং অন্যরা। তারা পুরো অঙ্কটি ‘টাকা’ থেকে ‘ডলারে’ রূপান্তর করে বলেন, ‘জিয়া পরিবারের ১২ দেশে ১২ বিলিয়ন (১২০০ কোটি) ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিএনআই), কানাডার টিভি চ্যানেল ন্যাশনাল ও সৌদি আরবের দুর্নীতি দমন বিভাগ’।
কিন্তু এ বিষয়ে অনলাইন গুগলসহ যে কোনো সার্চইঞ্জিনে অনুসন্ধান চালালে যে কেউ দেখবেন, একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য বিদেশি গণমাধ্যমের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে ওই গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের (জিএনআই) ও সৌদি এন্টি-করাপশন বিভাগের সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে কোথায়? সেখানেও বাংলাদেশের সংবাদ উৎস ছাড়া অন্য কিছু নেই। তবে ওই ‘জিএনআই’ বলে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক ‘সিম্যানটেক কানেক্ট কমিউনিটি’ এবং ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসে ‘ইনফরমেশন ফর বিজনেস’ বিষয়ক নিবন্ধিত একটি সংস্থার অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু সে দুটোতেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। উপরন্তু, ‘কানাডার টিভি চ্যানেল ন্যাশনাল’ বলেও কিছু নেই; রয়েছে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা সিবিসি টেলিভিশনের ‘ফ্ল্যাগশিপ ব্রডকাস্ট’ বা ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত প্রাত্যহিক সংবাদপ্রবাহমূলক রাতের অনুষ্ঠান ‘দ্য ন্যাশনাল’। এ বছরের পহেলা জুলাইয়ের পর থেকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পিটার ম্যান্সব্রিজের অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে তা পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপন করছেনÑ ইয়ান হানুমানসিং, এন্ড্রু চেং, এড্রিয়ান আর্সেনাল্ট ও রোজমেরি বার্টন। তথাপি সরাসরি ‘সিবিসি দ্য ন্যাশনাল’ এবং ওই চতুষ্ঠয়ের মাঝে এন্ড্রু চেংয়ের পাবলিক টুইটার না থাকায় অপর তিনজনকে টুইটার ম্যাসেজ পাঠিয়ে এবং সিবিসির ‘ন্যাশনাল’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে ই-মেইল করা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবার সম্পর্কিত দুর্নীতির কোনোই সংবাদ পাওয়া যায়নি; এমনকী অনলাইনে পুরনো অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ ছাড়াও কোনো প্রবাসী তেমন সংবাদ দেখেছেন বলেও জানাতে পারেননি। তা হলে পুরো বৃত্তান্ত জানা যাবে কোথায়, কেউ কি বলবেন? আফটার অল, জনগণের জানার অধিকারের কারণে সামাজিক মাধ্যমে একাগ্র ‘সিটিজেন জার্নালিস্ট’রা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন! এছাড়া সরকারেরই উদ্যোগী হয়ে এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা প্রয়োজন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন