আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের শরীক দলগুলোর চাওয়া আর না পাওয়া নিয়ে ‘অভিমান’, ‘ক্ষোভ’ আর ‘হতাশা’ ছিল বছর জুড়েই। এমন কি অদৃশ্য একটা ‘দ্বন্দ্ব’ও আছে। বছর শেষের দিকে সেই ক্ষোভ আর হতাশা উগরে দিলেন মহাজোটের দুই শরীক দল (জাদস-ইনু ও জাপা-এরশাদ)।
.
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শরীক দু’দলের এমন উম্মা প্রকাশ কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয় আওয়ামী লীগকে। তবে জোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দক্ষ নেতৃত্বে জোটের এ ক্ষোভ সামলে নিয়েছেন। যে কারণে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রীর কুষ্টিয়ায় জনসভার বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি বলে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে মহাজোট গঠিত হয়। জোটের অন্যতম শরিক দল জাপা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় যায় মহাজোট। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপি ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন হয় মহাজোট।
মহাজোটে জাপার অংশগ্রহণ নিয়ে নানা ‘নাটকীয়তা’ থাকলেও জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘বোঝাপড়া’ ছিল ভালো।
তবে হঠাৎ করেই চলতি বছরের শেষ দিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়ে ক্ষমতাসীনদের।
গত ৮ নভেম্বর জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নিজের নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা ৮০ পয়সা থাকতে পারেন। আপনি এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবেন না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনি ৮০ পয়সা আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে ৮০ পয়সা নিয়ে আপনারা (আ. লীগ) রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না। সুতরাং ঐক্য করেছি জাতির জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেই ঐক্যের ফসল হিসাবে আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী।’
এরপর দিন হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ছাড়া জাসদ নির্বাচনে গেলে ফল কী হবে তা ইনু নিজেও জানেন। আলোচনা করা ঠিক নয়। উনার যা ক্ষোভ আছে তা আমরা দলীয় ফোরামে, সরকারি ফোরামে আলাপ করে নেব। চিন্তার কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইনু সাহেব অভিমান, ক্ষোভ থেকে বোমা ফাটিয়েছেন। কেন এই অভিমান? উনি নিজেও জানেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে রেজাল্ট কী হবে। আগে করে তো টেস্ট করেছি। আমাদের দলের শরিক, তবে নির্বাচন একসঙ্গে করব। সরকারের সঙ্গে নির্বাচন করে কিছু আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।’
এদিকে জোটের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিরুপ মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও।
গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে বেইমানি করেছিল। ওই সময় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচন করেছিল। দলটি জাতীয় পার্টিকে ৪৮টি আসন দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। ৪৮টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই আওয়ামী লীগ তাদের নৌকার প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ এখনও চায় না জাতীয় পার্টির পরিধি বড় হোক।’
এর আগে ১৪ জুন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে জাতীয় পার্টির এক নেতার বাসায় ইফতারপূর্ব অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। তাই জাতীয় পার্টির সমর্থন ছাড়া তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।’
বছরজুড়ে মহাজোটের সঙ্গে শরিকদের ক্ষোভ হতাশা আর অভিমান থাকলেও সেই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক মাঠে আসেনি। বক্তব্য আর বিবৃতির মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে ঐক্য অটুট রেখে আরেকটি বছর শেষ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন