মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি প্রথম মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দুই মেয়াদে সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গাজীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি গাজীপুর জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
.
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
স্থানীয় সরকার পরিচালনায় তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারবার পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
একজন সক্রিয় রাজনীতিক হয়েও আমলাদের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করছেন, পরিবারকে কিভাবে সময় দিচ্ছেন এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নেই বা কী করছেন- এমন নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন পরিবর্তন ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহাদৎ স্বপনের সাথে। ছবি তুলেছেন রাফিয়া আহমেদ। পরিবর্তনের পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাতকারটি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
পরিবর্তন: চলতি বছরে উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে কিছু বলুন।
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: এ বছর সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুনভাবে বোনাস দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছি। সারাদেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। যদিও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। ২৫শে মার্চ আমরা নতুনভাবে সরকারি উদ্যোগে গণহত্যা দিবস হিসেবে এবছর থেকে পালন শুরু করবো। ২৬শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর ভিন্ন আঙ্গিকে এবং ভিন্ন মাত্রায় পালনের ব্যবস্থা করছি। এসব দিবসে দেশের সকল স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পরিবর্তন: এ বছর শেষ নাগাদ উল্লেখযোগ্য কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: সদিচ্ছা থাকলে কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ নয়। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের সচিচ্ছাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
পরিবর্তন: রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব কিভাবে সমন্বয় করেন?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: মন্ত্রিত্ব রাজনীতির মধ্য দিয়েই চলে। আমাদের রাজনীতির একটি কমিটমেন্ট থাকে, প্রতিশ্রুতি থাকে এবং কর্মসূচি থাকে, তা বাস্তবায়নের জন্যই মন্ত্রিত্ব। এটা আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই। আমরা রাজনৈতিভাবে যে কথাগুলো বলে এসেছি, এখন মন্ত্রী হিসেবে সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ করছি।
পরিবর্তন: মন্ত্রী থাকায় কাছের ও দূরের মানুষের সমালোচনাকে কিভাবে নেন?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: আমরা যেহেতু মানুষ, আমাদের ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, সমালোচনা থাকবে। কারণে অকারণে থাকতে পারে, তা আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় হাসিমুখে পজিটিভলি দেখি। মানুষ সমালোচনা করতেই পারে, কোনো মানুষই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তবে এ ব্যাপারে আমি সতর্ক থাকি যেন আমার আচরণে নিরপরাধ মানুষ কষ্ট না পায়। সাধারণ মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হউক, এমন কিছু আমি করতে চাই না।
পরিবর্তন: আমলাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে সমন্বয়টা কিভাবে করেন?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এটা আমলাদের কোনো দোষ নয়। তাদেরকে সবসময় ট্রেনিং দেওয়া হয় ‘না’ বলার জন্য। ‘না’ বলার জন্য কি উপাদান আছে তারা তা খোঁজেন। তাদের কোনো কিছু বললে, তখন তারা শুরুতে নেগেটিভ সাইটটা আগে দেখেন। আর আমরা যারা রাজনীতি করি, জনপ্রতিনিধিত্ব করি, তাদেরকে ‘হ্যাঁ’ বলানোর জন্য তাদের মধ্যে কি কি উপাদান আছে তা খুঁজি। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির তো একটি পার্থক্য থাকবেই।
পরিবর্তন: আমরা জানি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে রুট লেভেল থেকে উঠে এসে আজ আপনি মন্ত্রী। সংক্ষেপে আপনার অনুভূতি যদি বলেন।
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: আসলে রুট লেভেলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করায় আমার মন্ত্রিত্ব চালানো খুব সহজতর হয়েছে। মানুষের সমস্যাগুলো কি, মানুষের কোন জায়গায় ভোগান্তি, সেটা আমি একেবারে তৃণমূল থেকে দেখেছি। কাজেই সমস্যা বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না। মানুষ আইনের বেড়াজালে পড়ে কিভাবে হয়রানির শিকার হয়, তা প্রত্যক্ষ করেছি। এ অভিজ্ঞতা আমার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হয়।
পরিবর্তন: মন্ত্রী থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো অসন্তোষের মুখোমুখি হয়েছেন কি না?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: সেটা উনিই বলতে পারবেন। তবে আমি এমন কোনো কাজ করিনি, যাতে সরকার প্রধান অসন্তুষ্ট হবেন। আমার দায়িত্বই হচ্ছে সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। আমি সাধ্যমতো তা করার চেষ্টা করছি। কাজেই সরকার প্রধানের কোনো রকম ক্ষোভের বা অসন্তোষের শিকার হইনি।
পরিবর্তন: পরিবারকে কিভাবে সময় দেন?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: (জোড়ে হেসে দিয়ে) পরিবার এটা মেনেই নিয়েছে। তারা সময় একটু কম পায়। তবে তারা যখন দেখে মানুষের জন্যই কাজ করি। তখন না পাওয়ার কষ্ট তারা ভুলে যায়।
পরিবর্তন: ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হয়েছে?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: ২০২১ সালের রূপকল্পের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা খুবই ক্ষীণ। কারণ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কাজ করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে গৌরবগাঁথা ইতিহাস তা সংরক্ষণের জন্য। আর দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
পরিবর্তন: মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কতখানি গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে?
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: আমরা পুরোপুরিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। বিভিন্ন স্তরের জন্য আলাদা ভাতার ব্যবস্থা করেছি। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০ হাজার টাকা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন খেতাবধারী যেমন- বীরশ্রেষ্ট, বীরপ্রতীক ইত্যাদি তাদের জন্য প্রতি মাসে আলাদা আলাদা ভাতা-বোনাস ও চিকিৎসা আমরা নিশ্চিত করেছি। যেমন আগামী জানুয়ারি মাস থেকে সব মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে।
পরিবর্তন: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আ.ক.ম মোজাম্মেল হক: পরিবর্তনকে ধন্যবাদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন