টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ, টাঙ্গাইল হানাদারমুক্তকরণ, ঢাকা অভিমুখে মিত্রবাহিনীর যাত্রা নিষ্কণ্টক রাখা- সব কিছুতেই অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ইতিহাস এই সত্য মেনেও নিয়েছে। ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলে মাঠের যুদ্ধে টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর, যা ‘কাদেরিয়া বাহিনী’নামে সুপরিচতি- যোদ্ধারাই ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক, এই বাহিনীও একক প্রচেষ্টায় গঠন করেছিলেন সেদিনের যুবক কাদের সিদ্দিকী। ইতিহাস মেনে নিয়েছে, টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ আর কাদের সিদ্দিকী সমার্থক। আর সেই কাদের সিদ্দিকী নেই টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবসের বর্ণাঢ্য আয়োজনে!
.
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় টাঙ্গাইল শহর। টাঙ্গাইলের মানুষ মুক্তির আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে। চারদিক প্রকম্পিত হয় জয় বাংলা স্লোগানে। কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে সব কিছু। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধারা জামালপুর- টাঙ্গাইল-ঢাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন, যাতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যোদ্ধরা বিনা বাধায় ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে পারেন। তার পরের ইতিহাস সবারই জানা।
১৯৯০ সালে টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস প্রথম পালন করে সপ্তসুর সাংস্কৃতিক সংস্থা। পরে কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে দিবসটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হতে থাকে। ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত ৬ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করে তারা। ২০১২ সালে কাদেরিয়া বাহিনী শেষ অনুষ্ঠান করে। ওই বছর কাদের সিদ্দিকী ঘোষণা দেন, কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে আর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হবে না। এরপর থেকে টাঙ্গাইল পৌরসভার উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এতো দিন শহীদ মিনারে সীমিত আকারে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও গত বছর থেকে ব্যতিক্রম ঘটছে। গত বছর ৬ দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে। এ বছরও ৬ দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী-এমপি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীতশিল্পীসহ বরেণ্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ কাডে নাম রয়েছে। শুধু আমন্ত্রণ কাডে নাম নেই কাদেরিয়া বাহিনী-প্রধান কাদের সিদ্দিকীর! গত বছরও আমন্ত্রণ কাডে নাম ছিল না কাদের সিদ্দিকীর।
আজ সোমবার টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপনে কাদের সিদ্দিকীকে আসতে দেখা যায়নি। কাদের সিদ্দিকী ছাড়াই শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে ৬ দিনব্যাপী টাঙ্গাইল হানাদার মুক্তদিবস এবং বিজয় দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। পরে সেখান থেকে একটি বণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন