রাজধানীর ইস্কাটনে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার একমাত্র আসামি সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি। সম্প্রতি এ মামলার কয়েকটি ধার্য তারিখে আদালত প্রাঙ্গণে ‘নিয়ম ভেঙে’ এমপিপুত্র রনিকে দীর্ঘ সময় হাতকড়া ও অনেকটা পুলিশ পাহারা ছাড়াই ঘনিষ্ঠ লোকজনের সঙ্গে খোশগল্প করতে দেখা গেছে।
এমনকি বিচারকাজ চলাকালে তাকে ‘আসামিদের জন্য নির্ধারিত ডকে’ না বসে আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেছে।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আলোচিত জোড়া খুনের মামলাটির বিচারকাজ চলছে।
প্রচলিত নিয়মানুসারে, যেকোনো মামলার আসামিদের হাজিরা দিতে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে আনা হয়। এরপর আদালত প্রাঙ্গণের হাজতখানায় রেখে হাতকড়া পরিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে আনা-নেয়া করা হয়।
কিন্তু চলতি বছরের ১৫, ২২ ও ২৯ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলার নির্ধারিত তারিখে এ নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায় এমপিপুত্র রনির ক্ষেত্রে। তাকে হাতকড়া ছাড়াই আদালতে আনা-নেয়া করা হয়।
এজলাস থেকে বিচারক নেমে যাওয়ার পর অন্য সব আসামিদের কারাগারে পাঠানোর জন্য তাৎক্ষণিক জজকোর্ট হাজতখানায় নেয়া হলেও এমপিপুত্র রনিকে তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে আলাপ করতে দেখা যায়।
শুধু তাই নয়, আদালতে আসামিদের কাছে বাইরের খাবার বা অন্য কোনো কিছু দেয়ায় বাধা-নিষেধ রয়েছে। কিন্তু বিচারক এজলাস ত্যাগের পর রনিকে সেখানে বসেই খাবার খেতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিচার চলাকালে আসামিকে এজলাসের ভেতরে ‘আসামিদের জন্য নির্ধারিত ডকে’ থাকতে হয়। কিন্তু আসামি রনিকে বিচারকাজ চলাকালে ‘আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে’ বসে থাকতে দেখা গেছে।
এ সংক্রান্ত ভিডিও যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয়তলায় বসানো সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও এসব ঘটনার প্রমাণ মিলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু বকর ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, প্রচলিত নিয়মানুসারে হাজতি সব আসামিদের হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা-নেয়া করা হয় এবং বিচারকের সামনে নির্ধারিত কাঠগড়ায় রাখা হয়। এরপর বিচারকাজ শেষে আসামিদের হাতকড়া পরিয়ে গারদখানায় নেয়া হয়। তবে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রচলিত এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু বিচারকাজ নিশ্চিত করার জন্য সাধারণত বিচারসংশ্লিষ্ট লোকজনই এজলাসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। কারণ সব আসামির স্বজনরা এজলাসে প্রবেশ করলে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মো. আবদুল্লাহ আবু এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, আইন সবার ক্ষেত্রে সমান। এভাবে হাতকড়া ছাড়া আনা-নেয়া করে পুলিশ ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ নিতে পারে না। এসব চাঞ্চল্যকর মামলায় আসামিদের আদালতে আনা-নেয়ার সময় অবশ্যই হাতে হাতকড়া পরানো উচিত। কারণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তখন কর্তব্যরত পুলিশ দায়ী থাকবে। তাই এতবড় ঝুঁকি না নিয়ে তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত। দায়িত্বে অবহেলা হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আসামি হয়েও আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে বসে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার মো. শামীম যুগান্তরকে বলেন, আসামি রনি অসুস্থ মর্মে আদালতে কোনো প্রকার মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়নি। তবে প্রতিটি ধার্য তারিখেই আদালতের ‘মৌখিক অনুমতি’ নিয়ে এমপিপুত্র রনি আসামিদের জন্য নির্ধারিত ডকে না দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে বসে থাকেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে নিহত হন অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ জুলাই রনির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে ডিবি পুলিশ।
গত বছরের ৬ মার্চ মামলার একমাত্র আসামি রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় মোট ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি আসামি রনির আÍপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন