অপ্রকাশিত ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এক যুবলীগ নেতার দায়ের করা জিডিতে তথ্যের গড়মিল পাওয়া গেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে একই অভিযোগে দায়ের করা মামলা ও জিডিতে বলা হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে কটূক্তি করেন মাহমুদুর রহমান। কিন্তু গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. মঈনুল হোসেন ৯ ডিসেম্বর রাতে দায়ের করা সাধারণ ডায়েরীতে কটূক্তি ৩ ডিসেম্বর করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগটি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা রুজু করতে পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে পূর্বপশ্চিমকে জানিয়েছেন কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রথমে জিডি (নং-৩১০) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটি ৫৭ ধারায় মামলা হিসেবে গ্রহন করতে নিয়ম অনুযায়ী গাজীপুরের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পুলিশ সদর দফতরে অনুমতি চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা মত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তারিখ গড়মিল প্রসঙ্গে তিনি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বরই মাহমুদুর রহমান ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে কটূক্তি করেন। আমার কাছে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার কপিও রয়েছে। অভিযোগকারীও কালের কণ্ঠ পত্রিকার পেপার কাটিং সংযুক্তি দেখিয়েছেন।
তবে খোঁজ করে দেখা গেছে ৩ ডিসেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে কালের কণ্ঠসহ দেশের সকল পত্রিকার ছাপা সংস্করণ বন্ধ ছিল। এমনকি কালের কণ্ঠের ২ এবং ৪ ডিসেম্বরের ই-পেপার ঘেটে এসংক্রান্ত কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মঈনুল হোসেন পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ৩ ডিসেম্বর কটূক্তির বিষয়টি জানতে পারি। পরে ফেসবুক থেকে ইউটিউবের ভিডিও লিংকও পেয়েছিলাম। তিনি বলেন, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।
কালের কণ্ঠ সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কাছে ৩ ডিসেম্বরের পত্রিকার কাটিং রয়েছে।
তারিখ গড়মিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনার কাছে জানতে পারলাম অভিযোগে তারিখ ভুল করেছি। এখন মামলা রুজু হওয়ার পর সংশোধনী চেয়ে আদালতে আবেদন করবো। এজাহার সংশোধনী দেওয়ার নিয়ম আছে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবি আসাদুল্লাহ বাদল পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ফৌজদারী মামলা বা জিডি একবার লিপিবদ্ধ হয়ে গেলে তা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ অভিযোগ ৫৭ ধারায় পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী যে অভিযোগ এনেছেন তাতে ৫৭ ধারায় পড়ার সুযোগ কম। তবে পুরো বক্তব্য না শুনে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছেনা।
এবিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আমি অভিযোগকারীকে চিনি না। বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি কোন মন্তব্য করতে না চেয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু রাসেল সরকারের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একই বিষয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আইজীবি মেহেদী হাসান এলিস পূর্বপশ্চিমকে বলেন, মাহমুদুর রহমান নির্ভীক কলম সৈনিক। তিনি বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন কন্ঠস্বর। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের বলিষ্ঠ কন্ঠ স্তব্ধ করতেই এই হীন্য আয়োজন। আমরা গাজীপুর মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে দেখা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল (বিডিসি) ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমর ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মাহমুদুর রহমান দেশ, সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিথ্যা ও অশালীন বক্তব্য রাখেন। পরে তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ছড়িয়ে পড়ে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন