দলীয় নির্দেশ অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আসিফ শাহরিয়ার মনোনয়ন জমা দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে আসিফের ব্যাপারে দল থেকে বহিষ্কারাদেশ আসতে পারে। জাপার একটি বিশ্বস্ত সূত্র শনিবার পরিবর্তন ডটকমকে এমনটাই জানিয়েছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে জাপার এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘যদি আসিফ শাহরিয়ার স্যারের নির্দেশ মেনে না নেন, তাহলে তাকে পাঠানো সতর্ক বার্তাটিই সত্য হবে। আর এমনটা হলে নিজ দুর্গে বড় গৃহদাহে পুড়বে এরশাদ পরিবার।’
.
জানা গেছে, অনুষ্ঠিতব্য রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মহানগর সভাপতি ও সাবেক উপেজলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে দলের চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৪ জুন নগরীর সেনপাড়াস্থ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেন সাবেক সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সরকারে থাকা প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে নানান অভিযোগ তুলে ধরেন এরশাদের ভাতিজা।
আসিফ অভিযোগ করেন, সুবিধাভোগীরা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জাতীয় পার্টির লাগাম এখন এরশাদের হাতে নেই। রংপুরের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ হতাশ এবং পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুবিধাভোগীদের ফের সখ্য জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।
আসিফের এমন অভিযোগের কারণে রংপুর জেলা জাপার আহ্বায়ক কমিটি থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। দলের প্রভাবশালী এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জেলা জাপার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে কমিটি দেয়া হয়।
এদিকে তফসিল ঘোষণার মাস তিনেক আগেই মোস্তফাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় মাঠে নেমে পড়েন আসিফ শাহরিয়ার। বড় আব্বা এরশাদের ছবি, দলের পরিচয়সহ রাজনৈতিক পরিচিতি ছাড়াই নজরকাড়া ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুন সাঁটিয়ে চমক দেন নগরবাসীকে। ভোট প্রার্থনায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়ান তিনি।
স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ভেবেছিলেন আসিফ শাহরিয়ার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এরশাদ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু তা করেননি আসিফ। বরং তফসিল ঘোষণার পর সময়মতো মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন।
আপন ছোট ভাইয়ের ছেলে আসিফ শাহরিয়ারের এমন সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে আমলে নেননি এরশাদ। তাই তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে গত ১৮ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কারের হুমকিসহ চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু কে শোনে, কার কথা। বড়আব্বার প্রতি নাখোশ আসিফ শাহরিয়ার মনোনয়ন জমা দেয়ার কাজটি সেরে নিয়েছেন।
এদিকে জাপার ওই সূত্র আরো জানান, আসিফ শাহরিয়ারকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যদি তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তাহলে তারই মঙ্গল। না হলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে জাপার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার হতে হবে তাকে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর নবগঠিত রংপুর সিটিতে নির্বাচন হয়েছিলো। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু প্রথম মেয়র নির্বাচন হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এবার রংপুর সিটিতে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে এটি হবে প্রথম নির্বাচন। একারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাড়তি উত্তাপ আর উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন