ভিডিও >> আ. লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, বোমাবাজি-ভাঙচুর, আনন্দ মিছিল পণ্ড
25 Nov, 2017
বোমাবাজি, ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মুখে পণ্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় আনন্দ মিছিলসহ সব কর্মসূচি। এসব নিয়ে আজ শনিবার সকালে ও দুপুরে দুই দফার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ১৫টি গুলি ছুড়েছে। এসব ঘটনা চলাকালে সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে আনন্দ মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আজ সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠান চলাকালে কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু কিছু লোক নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেন। ককটেলের শব্দে মুহূর্তে শিশুরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আতঙ্কিত হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় তিনিসহ প্রশাসনের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম ফের শুরু করে তা সমাপ্ত করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভিনসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ১২ জন কাউন্সিলর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ অনেকে দোতলায় সভা করছিলেন।
ফিরোজ আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, এ সময় আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজাদা ও সাবেক চেয়ারম্যান স ম মোরশেদসহ কয়েকজন নেতা উপজেলা অফিস ভবন ঘেরাও করে তাণ্ডব শুরু করেন। তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ইউএনও অফিস, চেয়ারম্যানের অফিস, এলজিইডি, পরিসংখ্যান অফিস, নির্বাচন অফিসসহ বেশ কয়েকটি অফিস ভাঙচুর করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান অফিসের পিয়ন মশিয়ার রহমান এ সময় আহত হন। লাল্টুর নেতৃত্বে গ্রুপটি তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের পর তাঁরা বেরিয়ে আসেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, দলের সভাপতির অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘সকালের কর্মসূচিতে আমাকে বক্তৃতা করতে না দেওয়ায় ফুঁসে ওঠেন নেতাকর্মীরা। এ সময় চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। ফিরোজ আহমেদের লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তিনি পৃথক পথসভা করতে থাকায় সেখানেও হামলা করে ভাইস চেয়ারম্যান আরাফাতের সমর্থক শাহীন, রানা, শহিদ, বাবলু, ইমরান, তুহিনসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করেন।
লাল্টু বলেন, বোমাবাজি, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ কোনো অঘটনের সঙ্গে তিনি ও তাঁর সমর্থকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ফিরোজ আহমেদ নিজেই।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার কলারোয়া থানায় গিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষ করে সবাই বেরিয়ে আসার মুহূর্তে লাল্টু সমর্থকদের দেখে ফিরোজ সমর্থকরা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। শুরু হয় ফের ধাক্কাধাক্কি, মারামারি। এ সময় অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ থানা প্রাঙ্গণের মধ্যে আবার শুরু করে লাঠিপেটা। এতে আরো কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
ফিরোজ আহমেদ জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ভাই মন্টুকে মারপিট করে হাত ভেঙে দিয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, তাঁর সমর্থক ভুট্টোলাল গাইন, স ম মোরশেদ, প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল কালাম, ছাত্রলীগের মো. রাসেল, শ্রমিক লীগের আবদুর রহিম, সোনাবাড়িয়া ইউপির সদস্য নুরুল ইসলাম ও আনারুল সেখানে যাওয়া মাত্র তাঁদের দেখে ফিরোজ স্বপন কটূক্তি করেন। উত্তেজনাকর অবস্থায় তাঁদের থানার মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা শেষ হলেও কিছু বাড়তি কথার জন্য কিছুটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য মৃদু আহত হন। লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলে, কিছু ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ১৫টি ফাঁকা গুলি করে বলে জানান তিনি। তবে মারধর করে আহত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন