ফেনী জেলার ৩টি আসনের মধ্যে বেশি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩নং এ আসনটিতে। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই এক ডজনের মতো প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিএনপিতেও রয়েছেন একাধিক। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ফেনী-৩ আসনে সরব আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি অনেকটা রয়েছে নীরব। এ আসনে ভোটের হাওয়া বইছে আগ থেকেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন পেতে চলছে জোর লবিং ও তদবির। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। শেষ পর্যন্ত নৌকা-ধানের শীষের টিকিট কারা পাচ্ছেন- এ নিয়ে চলছে কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ডজনখানেক প্রার্থী প্রকাশ্যে থাকলেও বিএনপির প্রার্থীদের নীরব প্রচারণা চলছে এখানে। তবে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তরুণ নেতারা প্রাধান্য পাবেন- এমন আভাস পেয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে তৎপর। আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম শাহীন, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন, জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, জাপান আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম ভূট্টো, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু।
এছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীও আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট পেতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন পেতে লবিং চালাচ্ছেন বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি হাজী রহিম উল্যাহ। এদিকে বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে।
তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির সাবেক সহদফতর সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাছির উদ্দিন আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাদরাজ জামান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা দল নেত্রী সাহেনা আক্তার শানু।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু রাজধানী না এলাকা থেকে নির্বাচন করবেন- এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেননি। মিন্টুর ছোট ভাই দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেনও এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। আকবর হোসেন জানান, তিনি ও তার পরিবার দলের জন্য জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। এ আসনে তাদের পরিবার থেকে বেগম জিয়া মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী এমপির বড় ভাই ও ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদের নিজের গ্রামের বাড়ি দাগনভূঞা হওয়ায় তার নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রহিম উল্যাহ স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে মাঠে সরব রয়েছেন এরশাদের উপদেষ্টা ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক রিন্টু আনোয়ার। এ ছাড়া জাসদের (রব) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন ও বাসদ থেকে ডা. হারাধন চক্রবর্তীও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে দলীয় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরব রয়েছেন। অনেকেই বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ঈদ-পূজায় সরব ছিলেন এসব নেতা। তবে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচারণায় না থাকলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তৎপর রয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পেতে।
বিএনপির মনোনয়নের বিষয়ে আবদুল লতিফ জনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আজ অবধি যে কোনো বিপর্যয়ে দলের সঙ্গে ছিলাম। সততা ও দলের প্রতি বিশ্বস্ততার বিচারে যদি কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে বিশ্বাস করি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, ‘বিগত দুটি নির্বাচনে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি। এবারো মনোনয়ন চাইব। জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন জানান, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে আমি তার পক্ষে কাজ করব।
কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমার জন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারে। দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব, তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব’।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক রিন্টু আনোয়ার জানান, দল থেকে ফেনীর ৩টি আসনেই প্রার্থী তালিকা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে এ আসনে দল থেকে আমাকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান এমপি হাজী রহিম উল্যাহ বলেন, ‘তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। অবহেলিত সোনাগাজীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। বিগত সময়ের মতো এবারো তিনি আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এবং পাবেনও আশা করছেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন